স্টাফ রিপোর্টার, মোঃ ওমর ফারুকঃ
সাভারের আশুলিয়ায় প্রায় এক মাস ধরে নিখোঁজ কলেজ অধ্যক্ষ মিন্টু চন্দ্র বর্মনের খন্ডিত মরদেহ উদ্ধার করেছে র্যাব। এ ঘটনায় মূলহোতাসহ তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে মরদেহের খন্ডিত বাকি অংশ উদ্ধারে অভিযান চলছে বলে জানিয়েছে র্যাব। সোমবার (০৯ আগস্ট) দুপুর ১টার দিকে আশুলিয়ার জামগড়া রূপায়ন এলাকায় সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য জানান র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। মিন্টু চন্দ্র বর্মন লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার টংভাঙ্গা ইউনিয়নের বাড়াইপাড়া গ্রামের শরত বর্মনের ছেলে। তিনি আশুলিয়ার জামগড়া এলাকার সাভার রেসিডেনশিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন। নিহতের পরিবারের স্বজনরা জানান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় আশুলিয়ার জামগড়া এলাকায় ভাড়া বাসায় থেকে টিউশনি করিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন অধ্যক্ষ মিন্টু চন্দ্র বর্মণ। গত ১৩ জুলাই আশুলিয়ার বেরন এলাকা থেকে তিনি নিখোঁজ হন। এরপর পরিবারের সদস্যরা অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তার সন্ধান পাননি। তার ফোনও বন্ধ ছিল। পরে ২২ জুলাই তার ছোট ভাই দীপক চন্দ্র বর্মণ আশুলিয়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। অভিযোগ জানানো হয় র্যাবের কাছেও। র্যাব তদন্তে নেমে জানতে পারেন, মিন্টু বর্মণকে হত্যার পর লাশ ছয় টুকরো করে স্কুলের মাঠে পুঁতে ফেলা হয়। দেহ থেকে মিন্টুর মাথা বিচ্ছিন্ন করে রাজধানীর দক্ষিণখানের আশকোনার একটি ডোবায় ফেলে দেওয়া হয়।
র্যাব জানায়, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আশুলিয়ার জামগড়ায় রেসিডেন্সিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ এলাকায় মিন্টু বর্মণের লাশ উদ্ধারে অভিযান শুরু করে র্যাব। মিন্টু চন্দ্র বর্মণ সাত বছর ধরে আশুলিয়ার জামগড়া এলাকায় বসবাস করতেন। তিনি সেখানকার আমিন মডেল টাউন স্কুল অ্যান্ড কলেজে শিক্ষকতা করতেন। দুই বছর আগে (২০১৯ সাল) মিন্টু চন্দ্র বর্মণসহ চারজন মিলে জামগড়া এলাকায় একটি বাসা ভাড়া নিয়ে সাভার রেসিডেন্সিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ নামে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেন। অন্য তিন সহ-প্রতিষ্ঠাতা হলেন রবিউল ইসলাম, মোতালেব ও শামসুজ্জামান। মিন্টু চন্দ্র বর্মণ ছিলেন এর অধ্যক্ষ। গত ১৩ জুলাই থেকে তাঁর সন্ধান মিলছিল না। প্রায় ২৮ দিন ধরে তিনি নিখোঁজ ছিলেন। স্কুলের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক সনেকা বেগম জানান, মিন্টু স্যার অনেক ভালো ছিল। তিনি অনেক ভদ্র ছিলেন। মোতালেব ও রবিউল স্যারও ভালো। তারা এই কাজ করতে পারেন এটা বিশ্বাসই হচ্ছে না। এমন স্কুলে আমার সন্তানকে আর পড়াবো না। আমরা এখন অনেক আতঙ্কে রয়েছি। র্যাব সদর দফতরের মিডিয়া উইয়ং এর কমান্ডার খন্দকার আল মঈন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, প্রথমে ৭ জুলাই মিন্টুকে হত্যার পরিকল্পনা করে। পরে ১৩ জুলাই স্কুলটিতে কোচিং পরবর্তী সময়ে ১০৬ নম্বরে মিন্টুকে ডেকে নিয়ে যায় বাদশা ও মোতালেব। এসময় মিন্টুর মাথায় হাতুড়ি দিয়ে বাদশা আঘাত করে। পরে ৬ টুকরো করে মাথা রাজধানীর আশকোনার একটি ডোবায় ফেলে দেয়। বাকি ৫ টুকরো স্কুলের আঙিনায় পুঁতে রাখে তারা। তিনি আরও বলেন, মিন্টু বর্মণের সুনাম ও খুব ভালো শিক্ষক হওয়ায় পেশাগত হিংসা শুরু করেন গ্রেফতারকৃতরা। এছাড়া প্রতিষ্ঠানের লভ্যাংশ নিয়েও তাদের মধ্যে মনোমালিন্য ছিল। এর জের ধরেই তাকে হত্যা করে তারা। এরপর থেকেই রবিউল পলাতক ছিল। গত মধ্যরাতে রবিউলকে আব্দুল্লাপুর থেকে, তার ভাগিনা বাদশাকে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ থেকে আর মোতালেবকে আশকোনা থেকে গ্রেফতার করা হয়। পরে রবিউলের দেওয়া তথ্যমতে স্কুলের আঙিনা থেকে মিন্টুর শরীরের ৫টি খন্ডিতাংশ উদ্ধার করা হয়।