স্প্যানিশ পরিচালক পেড্রো আলমোদোভার নির্মিত ও পেনেলোপে ক্রুজ অভিনীত প্যারালাল মাদার্স প্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে গতকাল শুরু হচ্ছে ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসব। ৭৮তম আয়োজনে স্বর্ণসিংহের জন্য লড়বে ২১টি ছবি। এবারের আসরে মার্কিন-ব্রিটিশ ছবি আছে বেশ। কান চলচ্চিত্র উৎসবের পরিচালক থিয়েরি ফ্রেমো তো বিষয়টা নিয়ে একটু খোঁচাই দিলেন! নইলে ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবকে ‘মার্কিন সিনেমার প্রতি আবেগ’ বলে অভিহিত করবেন কেন? সেরা হওয়ার জন্য লড়বে অ্যানা লিলি আমিরপুরের মোনালিসা অ্যান্ড দ্য বøাড মুন। কেট হাডসন আছেন ছবিটিতে। ম্যাগি জিলেনহলের দ্য লস্ট ডটার ছবিতে আছেন অলিভিয়া কোলম্যান, ডাকোটা জনসন। এ ছাড়া পাবলো লারাইনের প্রিন্সেস ডায়ানাকে নিয়ে স্পেন্সারও লড়ছে এই বিভাগে। প্রধান চরিত্রে দেখা যাবে ক্রিস্টেন স্টুয়ার্টকে। এত গেল মূল লড়াইয়ের কথা। অন্য শাখায়ও আছে জনপ্রিয় ঘরানার ছবি। আছে ডেভিড গর্ডন গ্রিনের ‘হ্যালোইন কিলস’। ওদিকে ম্যাট ড্যামন, অ্যাডাম ড্রাইভার, বেন অ্যাফ্লেকের মতো তারকানির্ভর ছবি দ্য লাস্ট ডুয়েল নিয়ে এসেছেন স্যার রিডলি স্কট। দেখানো ডেনি ভিলেনাভের ডিউন। এই ছবিতেও আছে টিমোথি চ্যালামেট, রেবেকা ফার্গুসন, জশ ব্রোলিনের মতো একদল তারকা। ছবিগুলো দেখানো হবে প্রতিযোগিতার বাইরে। তবে আর্টহাউস সিনেমা যে নেই তা নয়। ফরাসি নির্মাতা স্তেফান ব্রিজের আঁ অত মন্দ, ইতালির নির্মাতা পাওলো সরেন্তিনোর দ্য হ্যান্ড অব গড, নিউজিল্যান্ডের নির্মাতা জেন ক্যাম্পিয়নের দ্য পাওয়ার অব দ্য ডগ, স্প্যানিশ নির্মাতা পেড্রো আলমোদোভারের প্যারালাল মাদার্স ছবির কথা বলা যায়। ভেনিসে বাংলা ছবি ও বাংলাদেশ এবারের উৎসবে হরাইজন বিভাগে প্রতিযোগিতা করবে কলকাতার আদিত্য বিক্রম সেনগুপ্তর ছবি ওয়ানস আপন আ টাইম ইন ক্যালকাটা। বাংলা ভাষার একমাত্র ছবি। এই ছবিতে বাংলাদেশেরও আছে যোগ। ছবিটিতে অভিনয় করেছেন বাংলাদেশি অভিনেত্রী রিকিতা নন্দিনী শিমু। ছবিতে সহকারী নির্দেশক হিসেবে কাজ করেছেন আরেক বাংলাদেশি সাদ্দাম খন্দকার। ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন ভারতীয় অভিনয়শিল্পী শ্রীলেখা মিত্র, ব্রাত্য বসু প্রমুখ। এর আগে আসা যাওয়ার মাঝে ও জোনাকি সিনেমা দিয়ে আলোচনায় আসেন আদিত্য। উপমহাদেশের আর একটা ছবিই আছে, পাকিস্তানি নির্মাতা সিমাব গুলের স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র মুলাকাত।
ভেনিসে আফগান নির্মাতা: ভেনিসে প্রথমবারের মতো প্যানেল ডিসকাশনের আয়োজন করা হয়েছে। আফগানিস্তানের নির্মাতা ও শিল্পীদের সংকট নিয়ে আলোচনা হবে। ৪ সেপ্টেম্বর তাতে অংশগ্রহণ করবেন আফগান নির্মাতা সাহরা করিমি। তিনি আফগানিস্তানের চলচ্চিত্রবিষয়ক সরকারি প্রতিষ্ঠান ‘আফগান ফিল্ম’-এর প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট। ২০১৯ সালে তাঁর ছবি হাওয়া, মরিয়ম, আয়েশা নিয়ে ভেনিসে গিয়েছিলেন তিনি। এ ছাড়া থাকবেন আরেক আফগান নির্মাতা সাহরা মানি। আলোচনাটি সঞ্চালনা করবেন ইতালিয়ান সাংবাদিক গিলিয়ানো বাত্তিস্তন।
কারা থাকছেন বিচারক: অস্কারজয়ী কোরীয় নির্মাতা বং জুন হো এবারের আসরে প্রধান বিচারক। প্যারাসাইটখ্যাত এই নির্মাতার ঝুলিতে আছে মেমোরিজ অব মার্ডার, দ্য হোস্ট ও মাদার-এর মতো অসাধারণ সব ছবি। বিচারক হিসেবে আরও আছেন ইতালিয়ান নির্মাতা সাভেরিও কোস্তানজো, বেলজিয়ান অভিনেত্রী ভার্জিনিয়া ফিরা, ব্রিটিশ অভিনেত্রী সিনথিয়া এরিভো, কানাডিয়ান অভিনেত্রী সারা গ্যাডন, রোমানিয়ান নির্মাতা আলেক্সান্ডার নানাউ ও তরুণ অস্কারজয়ী নির্মাতা ক্লোয়ি ঝাও।
সম্মাননা পাচ্ছেন যাঁরা: আজীবন সম্মাননা হিসেবে স্বর্ণসিংহ পাচ্ছেন লাইফ ইজ বিউটিফুলখ্যাত অভিনেতা ও নির্মাতা রবার্তো বেনিনি। আরও সম্মাননা পাচ্ছেন মার্কিন অভিনেত্রী জেমি লি কার্টিস। ৮ সেপ্টেম্বর দেওয়া হবে এই সম্মাননা। এ ছাড়া ব্রিটিশ নির্মাতা ও প্রযোজক গøাডিয়েটরখ্যাত স্যার রিডলি স্কটকে ‘কার্টিয়ের গেøারি টু দ্য ফিল্মমেকার’ পুরস্কার দেওয়া হবে চলচ্চিত্রে অবদান রাখার জন্য।
অনলাইনে দেখা যাবে ছবি: উৎসবে আসা ছবিগুলোর মধ্যে ২২টি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ও ১৪টি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র দেখা যাবে অনলাইনে। দেখতে কোনো অর্থ খরচ করতে হবে না। স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র িি.িভবংঃরাধষংপড়ঢ়ব.পড়স এবং পূর্ণদৈর্ঘ্য ছবিগুলো িি.িসুসড়ারবং.রঃ/ড়হফবসধহফ/নরবহহধষবপরহবসধ/ ঠিকানায় দেখা যাবে। তবে পূর্ণদৈর্ঘ্য ছবিগুলো শুধু ইতালি থেকেই দেখার সুযোগ থাকবে।
নিরাপত্তাব্যবস্থা: কোভিডের এই সময়ে নিরাপত্তা নিয়ে বেশ সচেতন ভেনিস কর্তৃপক্ষ। কেন? চলুন তার আগে একটা ছোট্ট ইতিহাস জেনে নিই। ‘কোয়ারেন্টিন’ এই সময়ের অতিপরিচিত একটি শব্দ। ইতালির ভেনিসে প্রথম এই পরিভাষা শোনা যায়। পনেরো শতকে ভেনিসীয় প্রজাতন্ত্রে বাইরের জাহাজ আসার পরে নাবিকদের ৪০ দিন সঙ্গনিরোধ করে রাখা হতো, যাকে ইতালিতে বলা হতো ‘কুয়ারান্টানা জিওর্নি’। এটা পরখ করতে যে তাদের মধ্যে প্লেগ আক্রান্ত কেউ আছে কি না। এখানেই প্রথম সঙ্গনিরোধক অতিমারি হাসপাতাল তৈরি করা হয়, যার পরিবর্তিত রূপই আজকের কোভিড-১৯ আইসোলেশন ওয়ার্ড। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় আগে থেকেই দক্ষ ভেনিস কর্তৃপক্ষ। অতিমারি মোকাবিলায় তাদের আছে দীর্ঘ অভিজ্ঞতা। ভেনিস পর্যটনপ্রধান জানিয়েছেন কী করে ভাইরাসের মোকাবিলা করতে হয়, তা এই শহরের ইতিহাস আগেই শিখিয়েছে। উৎসবে অংশগ্রহণকারীদের কোনো কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে না। তবে পুরো উৎসব এলাকায় থাকবে কড়া নিরাপত্তা। ঢুকতে লাগবে অ্যান্টি-কোভিড ১৯/গ্রিন পাস। এটি পেতে হলে থাকতে হবে টিকা কার্ড। অথবা করোনা থেকে ভালো হওয়ার সনদ। কিংবা নেগেটিভ ফলাফলের সনদ, তবে এটি ৪৮ ঘণ্টার বেশি পুরোনো হলে চলবে না। কোভিড টেস্টের জন্য ভ্রাম্যমাণ দলও থাকবে। উৎসব চলবে ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।