আধুনিক কৃষিব্যবস্থার কারণে হারিয়ে যাচ্ছে দেশি জাতের ধান। হাইব্রিড ও উচ্চ ফলনশীলের (উফশী) সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে দিনকে দিন বিলুপ্তির পথে বিভিন্ন প্রজাতির দেশীয় ধান। কয়েক বছর আগেও দেশে স্থানীয় জাতের বিভিন্ন প্রজাতির ধানের মধ্যে পাওয়া যেত নানান বৈচিত্র্য। এক আউশ বা আমনেরই স্বাদ, বর্ণ, গন্ধে ছিল ভিন্নতা। স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন নামে পরিচিত এই ধানগুলোর পুষ্টিমানও ছিল বেশি। প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যেও টিকে থাকত এসব স্থানীয় প্রজাতির ধান। কিন্তু হাইব্রিড ও উচ্চ ফলনশীলের ধানের প্রভাবে প্রায় হারিয়ে গেছে স্থানীয় বিভিন্ন জাতের ধান। কৃষি অধিদপ্তরের তথ্য মতে, ২০১০ এর পূর্বে চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায় প্রায় ৭০ প্রজাতির স্থানীয় ধানের চাষ হতো, সেখানে এখন হয় মাত্র ২০-২৫ প্রজাতির ধান। খাদ্যের ক্রমবর্ধমান চাহিদা, ফসলি জমি ভরাট এবং কলকারখানার ফলে কৃষিজমির পরিমাণ কমে যাওয়া, জমির উর্বরতা হ্রাসের কারণে কৃষক এখন চান্দিনা, মালা, ব্রিশাইল, ব্রি বালাম, আশা,সুফলা, প্রগতি,মুক্তা, ময়না, এই ধরণের দেশীয় বীজের পরিবর্তে হাইব্রিড কিংবা উফশী জাতের ধান আবাদের দিকে ঝুঁকছেন। কারণ স্থানীয় জাতের ধানের তুলনায় হাইব্রিডের উৎপাদন অনেক বেশি। কৃষি কর্মকর্তারা মনে করেন,নতুন নতুন উচ্চ ফলনশীল বিভিন্ন প্রজাতির ধান বাজারে আসতেছে। ফলে কৃষকরা আগের দেশীয় ধান থেকে মুখ ফিরিয়ে নতুন ধানের দিকে ধাবিত হচ্ছে। কারণ কোনো একটা জমিতে একনাগারে ৪-৫ বছর একই ধানের চাষ করা হলে এর পরবর্তীতে গিয়ে জমিটাতে ফলন কমে আসে। যার কারণে কৃষকরা এক জমিতে একই বীজ বার বার রোপন না করে বরং ২-৩ বছর পর পর অধিক ফলনের আশায় বীজ পরিবর্তন করে ফেলে। আর তাছাড়াও আগের দেশীয় ধানে কানি প্রতি ৫-সাড়ে ৫টন অর্থাৎ ৮০-৯০ আড়ি ধান হতো পক্ষান্তরে এখন হাইব্রিড ধানের বীজ রোপন করলে কানি প্রতি ৬-সাড়ে ৬টন অর্থাৎ, ১০০-১২০ আড়ি ধান পাওয়া যায়। যা দেশীয় বীজের তুলনায় অনেক বেশি। এই বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রমজান আলী বলেন,উচ্চ ফলনশীল, উন্নত মানের বিভিন্ন ধানের বীজ বাজারে আসতেছে। যেসব বীজে দেশীয় বীজের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ বেশি ফলন পাওয়া যায়। কৃষকরা তাদের খরচ পুষিয়ে অধিক ফলনের আশায় দেশীয় বীজ পরিহার করে উচ্চ ফলনশীল হাইব্রিডের প্রতি ঝুঁকছে। আর এসব দেশীয় বীজ যাতে একেবারেই হারিয়ে না যায় সেজন্য এসমস্ত বীজগুলো সংরক্ষণের চেষ্টা চলছে।