চুয়াডাঙ্গা সদর থানাধীন নতুন যাদবপুর গ্রামের গৃহবধূ জেসমিন আক্তার আয়নার গলাকাটা লাশ উদ্ধার করেছে সদর থানা পুলিশ। গত ০৮/০৯/২০২১ রাত ৩.৩০ ঘটিকার সময় নিজ গৃহে আয়নার গলাকাটা এবং বিবস্ত্র মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। নির্মম হত্যাকান্ডের শিকার আয়নার স্বামী হাবিবুর রহমান একজন কুয়েত প্রবাসী শ্রমিক। তাদের সংসারে ১৮ বছরের একটি মেয়ে এবং ৮ বছরের একটি ছেলে রয়েছে। মেয়ের বিয়ে হয়ে যাওয়ায় সে শশুর বাড়িতে থাকে এবং একমাত্র ছেলে আজমির থাকে পাশের বাড়িতে তার আপন ফুফুর কাছে। ফলে নিহত আয়না একাই থাকতেন, তার নিজ বাসায়। স্বামী প্রবাসে আর সন্তানরা দূরে থাকার কারণে আয়না বেগম নৃশংসভাবে খুন হন তার নিজের বাসায়। পাশের বাসায় থাকা আত্মীয়রা আয়নার ছটফটানির শব্দ শুনে পুলিশে খবর দেয়। তাৎক্ষনিকভাবে আমিসহ সদর থানা পুলিশ এবং ডিবি পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করি। আয়নার বাসার মেইন গেটসহ দরজা, জানালা বন্ধ থাকায় পাশের বাসার ছাঁদ বেয়ে মই যোগে আয়নার বাসার ছাঁদে পৌঁছে ছাঁদের দরজা খোলা পাওয়া যায়। ঘরের ভেতর ডুকে পাওয়া যায় আয়না@ জেসমিনের বিবস্ত্র মৃতদেহ। গলার ওপর থেকে উদ্ধার করা হয় রক্তমাখা ছুরি, আয়নার সম্পূর্ণ বিছানা আর দেহ রক্তে ভেজা। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হয়- ধর্ষন করার পর আয়নাকে ধারালো ছুরি দিয়ে গলা কেটে হত্যা করে একদল দূর্বৃত্ত। তারপর সুযোগ বুঝে ছাঁদের দরজা দিয়ে পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থল থেকে রক্তমাখা ছুরি জব্দ করা হয়। ভিকটিমের একটি ট্যাব আর তিনটি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়। আশেপাশে সার্চ করে পাইপের গোড়ায় একজোড়া রক্তমাখা স্যান্ডেল পাওয়া যায়। ধারণা করা হয়- আসামী দুতলা ছাঁদ থেকে এই পাইপ বেয়ে নীচে নেমে এসে বাড়ির বাউন্ডারি ওয়াল ডিঙিয়ে পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থল থেকে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ আলামত জব্দ করা হয়, আশেপাশের প্রথম সাড়াদানকারীদের বক্তব্য আর কিছু গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ঘটনাস্থল ও এর আশপাশ থেকে তিনজনকে আটক করা হয়। লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে লাশ পোস্ট মরটেম করার জন্য সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় ভয়ংকর তথ্য, চোখ কপালে উঠে যাওয়ার মত তথ্য দেন মৃত আয়না@ জেসমিনের সাবেক প্রেমিক মামুন (২৮)। মামুন জানায়, দীর্ঘ ১২ বছরের প্রেমের সম্পর্ক তাদের আর একবার তারা পালিয়ে বিয়েও করেছিল। কিন্তু পরে স্থানীয়রা বসে আপোষ মিমাংসা করে দেয়। আয়নার স্বামী প্রবাসে থাকায় প্রায় রাতেই মামুন চলে যেতো আয়নার ঘরে, আয়না একা একা বাসায় থাকায় মামুন পূর্ণ সুযোগ পেয়ে যায়। এক পর্যায়ে মামুন আয়নাকে বিয়ের জন্য চাপ প্রয়োগ করে। টাকা পয়সা সবকিছু নিয়ে মামুনকে বিয়ে করার জন্য আয়নাকে মানসিক চাপ দিতে থাকে মামুন। আয়না তাকে ছেলে মেয়ের দোহাই দিয়ে কিছুদিন অপেক্ষা করতে বলে। কিন্তু হঠাৎ করেই আয়নার স্বামী হাবিবুরের দেশে ফেরত আসার খবরে সবকিছু এলোমেলো হয়ে যায় মামুনের, সব স্বপ্নের অপমৃত্যু ঘটে। মামুন পরিকল্পনা করে আয়নাকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিতে হবে। প্ল্যানের অংশ হিসেবে মামুন তার প্রতিবেশি নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া রাব্বিকে কাজে লাগায়। ৫ শত টাকার বিনিময়ে রাব্বি বিভিন্ন দোকান ঘুরে মায়ের কথা বলে ৬ টি ঘুমের ট্যাবলেট ক্রয় করে। তারপর মামুনের কথামতো ঘটনার রাতে এশার নামাজের পর ৫টি ঘুমের ট্যাবলেট দিয়ে লেবু – ট্যাংক শরবত তৈরি করে আয়নাকে বলে ” এটা জমজমের পানি দিয়ে তৈরি শরবত”। বিশ্বাস করে এক নিঃশ্বাসে সবটুকু শরবত খেয়ে নেয় আয়না। সেই যে ঘুম, ঘুম থেকে আর জাগা হয়নি ভিকটিম আয়নার। অতপর মামুন ছাঁদের দরজা খোলা পেয়ে সরাসরি ঘরে ডুকে প্রথমে আয়নাকে ধর্ষন ; এবং ধর্ষণ শেষে ধারালো ছুরি দিয়ে গলা কেটে হত্যা। অকপটে স্বীকার করে প্রেমিক মামুন। ঘটনাস্থলে ফেলে যাওয়া জুতো জোড়াও মামুনের। মামুনের ঘরে থাকা ২ টি মোবাইল এবং তার রক্তমাখা লুঙ্গি জব্দ করা হয় তার ঘরে লুকানো অবস্থা থেকে। আর গ্রেফতারকৃত রাব্বির স্বীকারোক্তি মতে এবং তার দেখানো মতে তাদের বাড়ির চিলেকোঠা হতে ঘুমের ট্যাবলেটের খোসা উদ্ধার করা হয় ; জব্দ করা হয় যে গ্লাসে করে আয়নাকে শরবত খাওয়ানো হয়েছিল, সেই পানির গ্লাসও। আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে -আয়না হত্যা মামলার প্রধান আসামী মামুন এবং সহযোগী রাব্বিকে। একটি লোমহর্ষক এবং ঘৃন্যতম হত্যাকান্ড সংঘটনের ২৪ ঘন্টারও কম সময়ে মামলার দুজন আসামী গ্রেফতার এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট সকল আলামত জব্দ করা সম্ভব হয়েছে একদল চৌকষ আর প্রতিশ্রুতিশীল অফিসারদের কারণে। ধন্যবাদ এর সাথে সংশ্লিষ্ট সকল অফিসারদের।