• রবিবার, ২৬ জানুয়ারী ২০২৫, ০৮:৫৫ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম
সমৃদ্ধ রাজস্ব ভাণ্ডার গঠনে কাস্টমস অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে : প্রধান উপদেষ্টা স্বাধীনতার পর সব গুম- খুনের বিচারের দাবি জামায়াত আমিরের দেশে ফিরেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস দুর্বৃত্তরা গুজব ছড়িয়ে চট্টগ্রাম ইপিজেডকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে : সিএমপি বিএনপি’র রাজনৈতিক ক্ষমতার উৎস জনগণ : তারেক রহমান আওয়ামী লীগ ফেরত আসলে ফ্যাসিবাদ ফেরত আসবে : উপদেষ্টা মাহফুজ আলম হাসপাতাল ছেড়ে ছেলের বাসায় উঠেছেন বেগম খালেদা জিয়া নওগাঁ মহাদেবপুরে ভুমি কর্মকর্তাদের বিদায়ী সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে ভোলাচং যুব সমাজের উদ্যোগে মিনিবার ফুটবল টুর্নামেন্ট ফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিত। আনোয়ারায় জিয়াউর রহমানের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে শীতবস্ত্র বিতরণ

অরক্ষিত দেশের প্রবীণরাই বেশি

অনলাইন ডেক্স / ৪৯৭ Time View
Update : শুক্রবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২১

দেশে মোট জনসংখ্যার প্রায় ৭ দশমিক ৫ শতাংশ ৬০ বা তার বেশি বয়সি মানুষ। কোমরবিডিটি এবং দুর্বল ইমিউন সিস্টেমের কারণে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া মানুষের প্রায় ৮০ শতাংশই তারা। অথচ সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা এ জনগোষ্ঠীই টিকার নিরাপত্তা বলয় থেকে সবচেয়ে বেশি অরক্ষিত রয়ে গেছে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রবীণ নাগরিকদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকার আওতায় আনা উচিত ছিল। তাহলে করোনায় মৃতু্যর হার অনেকাংশে কমিয়ে আনা যেত। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে ষাটোর্ধ্ব নাগরিকদের বিশেষ ব্যবস্থায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশে এ ব্যাপারে নানা উদ্যোগের কথা বলা হলেও কার্যত তা বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে শহরের প্রবীণ নাগরিকদের পাশাপাশি গ্রামের খুবই স্বল্পসংখ্যক বয়স্ক মানুষ এখন পর্যন্ত টিকা পেয়েছেন। স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা জানান, গত আগস্ট মাসে দেশে গণটিকাদান কর্মসূচিতে সিনিয়র সিটিজেনদের প্রাধান্য দেওয়ার পরিকল্পনা থাকলেও এজন্য বিশেষ কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ফলে এ উদ্যোগ পুরোপুরিই ভেস্তে গেছে। এর কারণ হিসেবে তারা বলেন, কমিউনিটি এনগেজমেন্ট এবং মোবাইল ভ্যাকসিনেশন টিমগুলো বয়স্ক ব্যক্তিদের, বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে টিকা নিশ্চিত করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ তারা টিকা সম্পর্কে কম সচেতন। এছাড়া গুরুতর অসুস্থতার কারণে তাদের অনেকেই টিকা কেন্দ্রে যেতে পারেন না। হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, বিশ্বের সব দেশেই সিনিয়র সিটিজেনদের প্রথমে টিকা দিচ্ছে, কারণ তারা কোভিড-১৯ মহামারির সময় সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের দেশে এটা করা হয়নি। অনলাইন রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়ার কারণে টিকা বিতরণে এক ধরনের বৈষম্য তৈরি হয়েছে। অনেক বয়স্ক মানুষ টিকা দেওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছে। ডা. লেলিন চৌধুরী আরও বলেন, আমাদের দেশের বয়স্ক ব্যক্তিদের এক ধরনের টেকনোফোবিয়া এবং প্রযুক্তি ব্যবহারে অনীহা রয়েছে। তাই, অনেক বয়স্ক মানুষ ‘সুরক্ষা’ অ্যাপ ব্যবহার করে টিকার জন্য নিবন্ধন করতে পারেননি। কেবলমাত্র কিছু শিক্ষিত এবং শহুরে সিনিয়র সিটিজেন এ সুযোগ গ্রহণ করেছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের সাবেক উপদেষ্টা ও জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক বলেন, প্রবীণ নাগরিকরা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে জটিল অবস্থার সম্মুখীন হওয়ার ঝুঁকিতে থাকেন। কারণ তাদের অনেকের লিভার, ফুসফুস, কিডনি এবং হার্টের সমস্যা এবং ডায়াবেটিসসহ স্বাস্থ্য সংক্রান্ত জটিলতা থাকে। তাই অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও এই গোষ্ঠীর মধ্যে মৃতু্যর হার অনেক বেশি। তিনি বলেন, ‘ডবিস্নউএইচও নির্দেশিকা অনুসারে, প্রবীণদের ফ্রন্টলাইনারদের পরে বা যারা টিকা প্রদানের ক্ষেত্রে চিকিৎসা ব্যবস্থার সঙ্গে জড়িত তাদের পরে দ্বিতীয় সর্বাধিক অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত। কিন্তু আমাদের সরকার তা অনুসরণ করেনি, বরং টিকা দেওয়ার বয়সসীমা কমিয়ে ১৮ বছর করেছে। আমি মনে করি, এই ধরনের পদ্ধতি ডবিস্নউএইচও এর পরামর্শের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।’ দেশের করোনা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণকারী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেন, যারা টিকা নিতে কেন্দ্রে আসতে অক্ষম তাদেরকে বাড়িতে গিয়ে যাতে টিকা দেওয়া যায় এজন্য প্রত্যেক ওয়ার্ড বা ইউনিয়নে একটি ভ্রাম্যমাণ দল গঠন করা জরুরি। কেননা, বয়স্ক ও গুরুতর অসুস্থ অনেকেই শয্যাশায়ী; তাদের কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার মতো কেউ নেই। মোবাইল টিমগুলো এ ধরনের ব্যক্তিদের খুঁজে বের করে, তাদের বাড়িতে গিয়ে টিকা দিতে পারে। মোবাইল টিম গঠন না করলে অনেক সিনিয়র সিটিজেন ভ্যাকসিন কভারেজের বাইরে থাকবে বলে মনে করেন তারা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগ) ও মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন বলেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ৬০ বছরের বেশি বয়সি মানুষের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম, কিন্তু এই জনগোষ্ঠীর মৃতু্যর হার অনেক বেশি। কারণ তারা বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত। সিনিয়র সিটিজেনরা বেশিরভাগই তরুণদের দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছে এবং তাদের ৮০ শতাংশ করোনাভাইরাসের সংক্রমণে মারা যাচ্ছে। রোবেদ আমিন জানান, এবারের গণটিকা অভিযানে প্রবীণ নাগরিকদের অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। প্রতিটি টিকা কেন্দ্রে বয়স্ক পুরুষ ও মহিলাদের জন্য আলাদা সারি করা হয়েছে। প্রবীণ নাগরিকরা শুধুমাত্র এনআইডি কার্ড দেখিয়ে ভ্যাকসিন গ্রহণ করতে পারবেন। যাদের এনআইডি কার্ড নেই তারাও অন্যান্য নির্ভরযোগ্য নথি যেমন পাসপোর্ট, জন্ম সনদ বা জনপ্রতিনিধিদের দেওয়া অন্যান্য সার্টিফিকেট দেখিয়ে টিকা নিতে পারবে। এ ব্যাপারে মাঠ পর্যায়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এ নির্দেশনা মাঠ পর্যায়ে যে খুব বেশি গুরুত্ব পায়নি তা মঙ্গলবার (৭ সেপ্টেম্বর) থেকে সারাদেশে শুরু হওয়া গণটিকা কর্মসূচি পর্যবেক্ষণে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। শহর ও গ্রামাঞ্চলের বিভিন্ন টিকা কেন্দ্র থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, বয়স্ক, অন্তঃসত্ত্বা ও যে মায়েরা শিশুদের বুকের দুধ খাওয়ান তাদের অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা থাকলেও টিকা নিতে আসা এসব মানুষ অগ্রাধিকার পাননি। টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে সকাল ৯টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত প্রথম দুই ঘণ্টা তাদের অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হলেও কার্যত তা মানা হয়নি। মঙ্গলবার রাজধানীর বিভিন্ন টিকাদান কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, ষাটোর্ধ্ব অনেক নারী-পুরুষ জাতীয় পরিচয়পত্র জমা দিয়ে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করছেন। অথচ তরুণরা টিকা নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছেন। যারা টিকা নিচ্ছেন তাদের এক- তৃতীয়াংশেরই বয়স কম। এদিকে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দেশে যেভাবে টিকাদান কর্মসূচি চলমান, তাতে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছানো কঠিন হবে। তাদের ধারণা, ভাইরাস থেকে নিরাপদ থাকার জন্য প্রতি বছর বুস্টার ডোজ প্রয়োজন হতে পারে। তাই সরকারের আগামী বছরের মার্চের মধ্যে টিকা অভিযান শেষ করার টার্গেট রাখতে হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছেন ১ কোটি ৯৩ লাখ ৪০ হাজার ৪৮৮ জন। যা মোট জনসংখ্যার ১১.৯ শতাংশ। দুই ডোজ টিকা নিয়েছেন ৮৭ লাখ ৩৩ হাজার ৭৮৪ জন। যা মোট জনসংখ্যার ৫.৪ শতাংশ। স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা জানান, কেবলমাত্র দুই ডোজ টিকা নিলেই একজন মানুষের শরীরে প্রত্যাশিত সুরক্ষা শক্তি তৈরি হয়। আমাদের লক্ষ্য হলো, দেশের ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকা প্রদান। টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রধান লক্ষ্য বেশি মৃতু্য ঝুঁকিতে থাকা ষাটোর্ধ্ব জনগোষ্ঠীকে আগে টিকা দেওয়া। অথচ এখন পর্যন্ত দেশে তারাই সবচেয়ে কম টিকা পেয়েছেন। তাদের চেয়ে অনেক বেশি টিকা পেয়েছেন চলিস্নশ থেকে ঊনপঞ্চাশ বছর বয়সিরা এবং তাদের চেয়েও বেশি পেয়েছেন চলিস্নশের কম বয়সিরা। অর্থাৎ যাদের জন্য সুরক্ষা বেশি দরকার এখন পর্যন্ত তারাই বেশি অরক্ষিত। এদের সংখ্যা শূন্য দশমিক ৫ শতাংশের কম।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category

ফেসবুকে আমরা