শুক্রবার (১০ সেপ্টেম্বর) শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হয় দুদল। যেখানে প্রথমে ব্যাট করে অধিনায়ক টম ল্যাথামের ফিফটিতে ভর করে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ১৬১ রান সংগ্রহ করে সফরকারীরা। মিরপুরের গত ৪ ম্যাচের পিচ বিবেচনায় এই সংগ্রহ ছিল অনেকটা পাহাড়সম। জবাবে ব্যাট করতে নেমে পুরো ওভার খেললেও ৮ উইকেট হারিয়ে ১৩৪ রানের বেশি করতে পারেনি বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের বোলারদের খরুচে বোলিংয়ের দিন ব্যাটিংয়ে নাঈম শেখ, আফিফ হোসেন ও মাহমুদউল্লাহ ছাড়া কেউই সমর্থন দিতে পারেননি।
গত চার ম্যাচে অপরিবর্তিত একাদশ থাকলেও শেষ ম্যাচে বাংলাদেশ দলে এসেছে চার পরিবর্তন। আঙ্গুলে পাওয়া চোটের কারণে সাকিব আল হাসান ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনকে বিশ্রামে রাখা হয়। বিশ্রামে রাখা হয় মোস্তাফিজুর রহমান ও মেহেদি হাসানকেও। দলে ফিরেছেন সৌম্য সরকার, শামিম হোসাইন, তাসকিন আহমেদ ও শরিফুল ইসলাম।
অপরদিকে নিউজিল্যান্ড দলে আসে তিন পরিবর্তন। ব্লেয়ার টিকনার, হামিশ বানেট ও চোট পাওয়া টম ব্লান্ডেলের বদলে দলে ফিরেছেন স্কট কুগেলিন, বেন সিয়ার্স ও জ্যাকব ডাফি।
১৬২ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে নিউজিল্যান্ড বোলারদের সামনে হতাশা উপহার দেন বাংলাদেশের টপঅর্ডাররা। দলীয় ২৬ রানে প্রথম উইকেট হারালেও এরপর নিয়মিত বিরতিতে আরও ৩ উইকেট খোয়ায় স্বাগতিকরা। ২১ বলে ৩টি চারে ২৩ রান করা নাঈম শেখ বেন সিয়ার্সের বলে বিদায় নেন। আর ১০ রান করে স্পিনার এজাজ প্যাটেলে বলে স্কট কুগেলিনের কাছে ক্যাচ দেন।
অস্ট্রেলিয়া সিরিজে বাজে ব্যাট করা সৌম্য সরকার এই সিরিজের প্রথম ৪ ম্যাচে সুযোগ না পেলেও শেষ ম্যাচে মাঠে নামেন। তবে ব্যর্থতার বৃত্ত থেকে বের হতে পারেননি এদিনও। কোল ম্যাককোঞ্চির বলে রাচিন রবীন্দ্রকে ক্যাচ দেন তিনি। ৯ বল খেলে মাত্র ৪ রান আসে তার ব্যাট থেকে। পরে অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিমও ব্যর্থ হয়ে মাঠ ছাড়েন। ৮ বলে ৩ রান করে রবীন্দ্র শিকারে মাঠ ছাড়েন। দলীয় ৪৬ রানে শীর্ষ ৪ ব্যাটসম্যানকে হারায় বাংলাদেশ।
তবে শুরুর বিপদ সামাল দিয়ে পঞ্চম উইকেট জুটিতে বাংলাদেশকে পথ দেখাতে থাকেন আফিফ হোসেন ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। এই জুটি ঝড়ো ব্যাট করে ৪৩ বলে ৬৩ রান তোলেন। যেখানে মাহমুদউল্লাহ ২১ বলে এক চার ও এক ছক্কায় ২৩ রান করেন। কুগেলিনের বলে তুলে মারতে গিয়ে ফিন অ্যালেনকে ক্যাচ দেন অধিনায়ক।
এরপর নুরুল হাসান সোহান ও শামীম হোসেন পাটোয়ারী এসে অবশ্য বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। এজাজ প্যাটেলের বলে এলবির ফাঁদে পড়েন ব্যক্তিগত ৪ রান করা উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান সোহান। আর জ্যাকব ডাফির বলে বোল্ড হওয়া শামীম করতে পারেন মোটে ২ রান।
শেষদিকে তাসকিন আহমেদ ৪ বল খেলে ২টি চারে ৯ করে কুগেলিনের বলে বোল্ড হন। তবে নিজেকে ফের জানান দেওয়া তরুণ আফিফ ৩৩ বলে ২টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৪৯ রানে অপরাজিত থাকেন।
কিউই বোলারদের মধ্যে এজাজ ও কুগেলিন ২টি করে উইকেট পান। একটি করে উইকেট দখল করেন ডাফি, কোল ম্যাককোঞ্চি, সিয়ার্স ও রবীন্দ্র।
টস জিতে এর আগে প্রথমে ব্যাটিংয়ে নেমে দুই ওপেনার ফিন অ্যালেন ও রাচিন রবীন্দ্রের ব্যাটে দারুণ শুরু পায় নিউজিল্যান্ড। অবশ্য দ্বিতীয় ওভারেই একবার জীবন পান রবীন্দ্র। নাসুমের শর্টলেংথের বলটা টেনে মেরেছিলেন কিউই ব্যাটসম্যান, ডিপ মিডউইকেটে একটু নীচু হয়ে হাতে নিতে পারলেও রাখতে পারেননি বিশ্বকাপ দলে ডাক পাওয়া শামীম হোসেন। এরপরের দুই বলে চার ও ছক্কা হাঁকান অ্যালেন।
চতুর্থ ওভারে আক্রমণে আসেন সিরিজে প্রথম ম্যাচ খেলতে নাম শরীফুল। এই বাঁহাতি পেসারের ওভারে আসে ১৯ রান। সবমিলিয়ে নিজের প্রথম ৯ বলেই ৩০ রান খরচ করা শরীফুলই প্রথম ব্রেক-থ্রু এনে দেন।
শরীফুলের করা ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারের প্রথম বলেই ছক্কা হাঁকান অ্যালেন। এক বল পরে বাউন্ডারি হাঁকান রবীন্দ্র। তবে চতুর্থ বলেই মিড-অনে তুলে মারেন রবীন্দ্র, মিড-অফ থেকে অনেকটা দৌড়ে গিয়ে দারুণ ড্রাইভে বল তালুবন্দি করেন মুশফিকুর রহিম। ১২ বলে ১৭ রান করে বিদায় নেন রবীন্দ্র। কিউইদের ওপেনিং জুটিতে ৫৮ রান আসে।
পরের বলেই অ্যালেনকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন শরিফুল। আম্পায়ার আউটও দেন। কিন্তু রিভিও নিয়ে সে যাত্রায় বেঁচে যান কিউই ওপেনার। তবে অ্যালেনের শেষরক্ষা হয়নি। ওভারের শেষ বলেই দুর্দান্ত খেলতে থাকা অ্যালেনকে বোল্ড করে ফেরান শরিফুল। বিদায়ের আগে ২৪ বলে ৪ চার ও ৩ ছক্কায় ৪১ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেন অ্যালেন।
টানা দুই উইকেট হারানো কিউইদের আরও এক ধাক্কা দেন আফিফ হোসেন। পার্ট-টাইম স্পিনারের চতুর্থ বলে বিদায় নেন উইল ইয়াং (৬)। ১০ ওভার শেষে কিউইদের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৩ উইকেটে ৮১ রান। এরপর সৌম্য সরকারের আগের ওভারে ছক্কা হাঁকানো কলিন ডি গ্র্যান্ডহোমকে (৯) বিদায় করেন নাসুম আহমেদ। এ সিরিজে এ নিয়ে চতুর্থবার নাসুম আহমেদের শিকার গ্র্যান্ডহোম।
দ্রুত কয়েকটি উইকেট পড়ার পর কিউই ইনিংসের পুনর্গঠনের কাজটা করছিলেন টম ল্যাথাম ও হেনরি নিকোলস। দুজনের জুটিতে আসে ৩৫ বলে ৩৫ রান। ১৭তম ওভারে তাসকিনের বলে দারুণ এক ক্যাচে বিদায় নেন নিকোলস। অফস্টাম্পের বাইরের বলে ব্যাট চালিয়েছিলেন তিনি, বাঁদিকে ঝাঁপিয়ে ক্যাচ নেন নুরুল।
সঙ্গী হারালেও রানের চাকা সচল রাখার কাজ চালিয়ে যান ল্যাথাম। কিউই অধিনায়ক শুরুতে দেখেশুনে ব্যাট করলেও ধীরে ধীরে হাত খুলতে থাকেন। তাসকিনের করা ১৯তম ওভারে বিশাল ২ ছক্কা ও ১টি চার হাঁকান তিনি। ওই ওভারে তার ব্যাট থেকে আসে ১৮ রান। এরপর শরিফুলের করা শেষ ওভারে সিরিজে নিজের দ্বিতীয় ফিফটি তুলে নেন কিউই অধিনায়ক। মাত্র ৩৭ বলে তার ঝড়ো ফিফটিতেই বড় সংগ্রহ পায় কিউইরা। ম্যাকনচি ১০ বলে ১৭ রান নিয়ে অপরাজিত থাকেন।
বল হাতে দেদারসে রান খরচ করা শরীফুল নেন ২ উইকেট। ১টি করে উইকেট যায় আরেক খরুচে বোলার তাসকিনের ঝুলিতে। এছাড়া নাসুম ও আফিফ নিয়েছেন ১টি করে উইকেট।