আমাদের দেশের প্রায় প্রতিটি লোকালয়েই মসজিদ রয়েছে। এসব মসজিদ ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের একক ব্যক্তিগত বা সমষ্টিগত দানে গড়ে উঠেছে এবং এগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ খাতে ব্যয়িত অর্থের একটি বড় অংশ ব্যক্তিগত দান থেকে প্রাপ্ত অর্থ দ্বারা নির্বাহ করা হয়। আমাদের রাজধানী শহর ঢাকাসহ জেলা শহরগুলোতে কিছু কিছু মসজিদ রয়েছে যার নির্মাণ ব্যয় ও রক্ষণাবেক্ষণ সরকার প্রদত্ত অনুদানের অর্থে নির্বাহ করা হয়। একক ব্যক্তিগত বা সমষ্টিগত দানে গড়ে ওঠা মসজিদে দানবাক্সের মাধ্যমে অর্থ আদায় করা হয়। জুমার নামাজের সময় এ ধরনের প্রতিটি মসজিদে দেখা যায় কাবলাল জুমার সুন্নাত নামাজ আদায় পরবর্তী প্রতিটি কাতারের সম্মুখ দিয়ে দানবাক্স চালু করে অর্থ আদায় করা হয়। মসজিদের জন্য অর্থ প্রদান পুণ্যের কাজ মনে করায় মুসল্লিদের প্রায় সবাই জুমার দিন কিছু না কিছু অর্থ দানে সচেষ্ট থাকেন। ওয়াক্তের নামাজের সময় কিছু কিছু মসজিদে ব্যতিক্রম ব্যতীত সচরাচর অর্থ আদায়ের জন্য দানবাক্স চালু করা হয় না। অর্থ দানের মাধ্যমে মসজিদ নির্মাণ বা মসজিদের উন্নয়ন, সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য অর্থ দানকে সদকায়ে জারিয়া বলা হয়।
ইসলাম ধর্মমতে জীবিত অবস্থায় একজন ব্যক্তির দান হলো সদকায়ে জারিয়া। সদকায়ে জারিয়া আরবি শব্দ। সদকা শব্দের অর্থ দান করা এবং জারিয়া শব্দের অর্থ সদাস্থায়ী। সদকায়ে জারিয়া এমন ধরনের দান যার কার্যকারিতা কখনো শেষ হয় না। সদকায়ে জারিয়ার সওয়াব কেয়ামত পর্যন্ত অব্যাহত থাকে এবং সদকাকারী ব্যক্তি মৃত্যুর পরও কবরে শুয়ে এর সওয়াব পেতে থাকেন।
আল্লাহ তায়ালা বিত্তবানদের ওপর সম্পদের জাকাত এবং ওশর ফরজ করেছেন। সে সাথে সদকার ব্যাপারেও তাগিদ দিয়েছেন। ইসলামে জাকাত ও ওশরের বিধান নির্ধারণ করে দেয়া আছে অপর দিকে সদকার ব্যাপারে কোনো সীমারেখা দেয়া নেই। সদকার ব্যাপারে ধনী-দরিদ্রের কোনো শর্ত নেই এবং যেকোনো ব্যক্তি সদকা করতে পারেন। হাদিসের ভাষ্য মতে, মানুষ যখন মৃত্যুবরণ করে তখন তার আমলের দরজা বন্ধ হয়ে যায়। শুধু তিনটি আমল জারি থাকে, যথা (ক) সদকায়ে জারিয়া (খ) উপকারী জ্ঞান এবং (গ) নেক্কার সন্তানের দোয়া।
ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা শহরের অভ্যন্তরস্থ সড়ক এবং মহাসড়কের পাশে প্রায়ই দেখা যায় চেয়ার-টেবিল নিয়ে বসে কিছু ব্যক্তি মাইকের মাধ্যমে পথচারী ও বিভিন্ন যানবাহনে চলমান যাত্রীদের মনোযোগ আকর্ষণ করে মসজিদের নামে অর্থ আদায়ে সচেষ্ট। এভাবে এমন অনেক মসজিদের নামে অর্থ আদায় করা হয় যেগুলোর অবস্থান আদায়কৃত স্থান থেকে অনেক দূরে এবং ক্ষেত্রবিশেষে ভিন্ন শহরে বা জেলায়। আবার এমন দেখা যায় জমা রসিদ বই হাতে নিয়ে পথচারী ও যানবাহনের অভ্যন্তরে যাত্রীদের কাছে থেকে অর্থ আদায়ে লিপ্ত। মাইকিংয়ের মাধ্যমে অর্থ আদায়ের ক্ষেত্রে কিছু কিছু ক্ষেত্রে টেপরেকর্ডারে ধারণকৃত বক্তব্য প্রচার করে দানের আহ্বানে সাড়া দিতে বলা হয়। রাস্তার পাশে অনবরত সকাল থেকে রাত অবধি মাইকে আহ্বান জানিয়ে মসজিদে দানের জন্য অর্থ চাওয়া একধরনের গণ-উপদ্রব যা দেশের প্রচলিত দণ্ড আইন অনুযায়ী শান্তিযোগ্য অপরাধ।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, এভাবে যারা অর্থ আদায় করেন তাদের অনেকে বিভিন্ন মসজিদ কর্তৃক দৈনিক নির্ধারিত অংঙ্কের মজুরির বিনিময়ে আদায়ের কাজে লিপ্ত আবার অনেকে দৈনিক বা মাসিক মসজিদে নির্ধারিত অঙ্কের অর্থ জমা দেবেন এমন শর্তে নিয়োজিত। এমন অনেক এভাবে অর্থ আদায় করছেন যার সাথে মসজিদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। এভাবে আদায়কৃত অর্থের সম্পূর্ণ অংশই তারা লোপাট করছেন যা প্রতারণা বৈ অন্য কিছু নয়।