সাধারনত যারা সাহিত্য চর্চা করেন তারা কৈশোরে যৌবনেই লেখা শুরু করেন। শরৎচন্দ্র শুরু করেন প্রায় উনচল্লিশ বছর বয়সে। তিনি মূলত উপন্যাস ও ছোট গল্পের জন্য বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেন। তার উল্লেখযোগ্য উপন্যাস হলো-দেবদাস, শ্রীকান্ত, চরিত্রহীন, মেজোদিদি, পল্লী সমাজ, গ্রহদাহ ইত্যাদি। পথের দাবি একমাত্র উপন্যাস যা সরকার কর্তৃক বাজেয়াপ্ত হয়েছিল। তাঁর লেখা উপন্যাস নিয়ে চলচিত্র নির্মাণ হয়েছে। তাঁর মধ্যে দেবদাস খুবেই জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। গল্পের চরিত্র দেব ও পারু যা আজও পাঠকের হৃদয়ে নাড়াদেন। তেমনি চরিত্রহীন উপন্যাসের কিরণময়ী ও দিবাকর। “তোমার মনটা হল আসলে বৈরাগীর মন, উদাসীনের মন প্রজাপতির মতো। বাঁধন তুমি কখেনা কোনকালে নেবে না।”( শ্রীকান্ত) শরৎচন্দ্র সাহিত্য সুখ্যত নারী জাতির মঙ্গল গানে মুখের এবং গৃহীত জীবন বৃত্তচ্যুত যৌবনবতী নারীর জীবনের ও মর্যাদার সমস্যাই তার প্রধান বক্তব্য। তার সাহিত্যে পাপ সহ্য করার ও পাপীকে ক্ষমা করার দীক্ষাই দেয়। কেননা, মানুষ ভাল নয়, মন্দ ও নয়। কখনো ভালো কখনো মন্দ, কারো জন্য ভালো, কারো জন্য মন্দ এবং চিরকালের জন্য মন্দ নয়। মানুষের প্রতি এমনি একটা আশা বা বিশ্বাস জন্মানোর জন্য চেষ্টা তাঁর রচনায় ছিল। পাঠকরা অনেকেই সমালোচনা করে থাকেন। শরৎচন্দ্র শুধুমাত্র হিন্দু চরিত্র অংকন করেছেন, মুসলমান নিয়ে তিনি কিছুই লিখেননি। পল্লীকবি জসীম উদ্দীনের ‘যাদের দেখিছি’ বইতে কবি উল্লেখ করেছেন। কবি শরৎচন্দ্রকে প্রশ্ন করেছেন আপনি শুধুমাত্র হিন্দুদের নিয়ে কেন লেখেন, মুসলমানদের নিয়েওতো লিখতে পারেন। উত্তরে শরৎচন্দ্র বলেছেন-পল্লী কবি জসীম উদ্দীন আপনি আমার শ্রীকান্ত চতুর্থ পর্ব পড়ে দেখবেন। শ্রীকান্ত এর চতুর্থ পর্ব পড়ে পল্লী কবি বলেন, একেবারে পাগল হইয়া উঠিলাম। আনন্দরস তাড়াতাড়ি ফুরাইয়া যাইবে মনে করে প্রতিদিন ২ পাতার বেশি পড়িতাম না। ছোট বেলার বন্ধু ছিল গহোর নামে মুসলমান ঘরের এক ছেলে। গহরের বাসায় বিভিন্ন ধরণের পিঠা খেত এবং মাঠে-ঘাটে ঘুরে বেড়াতো শরৎচন্দ্র। এমনকি গহরের মৃত্যুর সময় তার কাছে থাকা অর্থ-সম্পদ শরৎচন্দ্রকে দেওয়ার জন্য বলে যান। শরৎচন্দ্র ১৬ জানুয়রী ১৯৩৮ খ্রি: ৬১ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেণ। শরৎচন্দ্র মননশীল নন, হৃদয়বান। কাজেই তার রচনার আবেদন মস্তিস্ক স্পর্শী নয়-হৃদয়ভেদী। তাই নারীর ও খনন স্বল্প পুরুষের কাছে প্রিয় থাকবে তার সাহিত্য। এজন্য তিনি যা লিখেন তাই ভাল। শরৎ সাহিত্যের পাঠক মনকে ক্লান্ত করে না কখনো। রচনার গুণেই তাঁর শিল্প, তাঁর শক্তি তাঁর প্রতিভা।