রংপুরে মানব পাচারকারী সংঘবন্ধ চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। গত মঙ্গলবার ভোরে র্যাব-১৩ ব্যাটালিয়ন সদরের একটি আভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রংপুর জেলা হতে মানব পাচার সংঘবদ্ধ চক্রের দুই জন সদস্যকে গ্রেফতার করেন।
বুধবার (১৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রংপুর র্যাব সদর দপ্তরের মাহমুদ বশির আহমেদ স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানান। গ্রেফতারকৃতরা হলেন- গাইবান্ধা জেলার মুজিবুর রহমান মুছা (৫৫) ও রংপুরের অহিদুল ইসলাম (৫০)।
র্যাব কর্মকর্তা আরও জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাদের নিকট হতে চাঞ্চল্যকর বেশ কিছু তথ্য পাওয়া যায়। তারা স্বীকার করে যে, দীর্ঘদিন ধরে তারা গ্রামের সহজ সরল লোকদেরকে টার্গেট করে বিভিন্ন প্রকার প্রতারণার ফাঁদ সৃষ্টি করে মানব পাচার করত। নিরিহ লোকজনদের সর্বশান্ত করাই তাদের একমাত্র নেশা ও পেশা। তাদের এহেন কর্মকান্ডের ফলে আজ বহু মানুষ শারীরিক, মানুষিক ও আর্থিক ক্ষতির শিকার। এমনি একজন ভুক্তভোগী সহজ সরল গ্রামের বাজারে একটি মোবাইল মেরামত দোকানের মালিক পরিবারবর্গ নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিল। একদিন ভুক্তভোগীর দোকানে তারা ফ্লেক্সিলোড করার জন্য আসলে কথায় কথায় আলাপ চারিতায় ঐ ভুক্তভোগীর সাথে পরিচয় হয়। তারা জানায় যে, অতি অল্প টাকায় অধিক সুযোগ সুবিধায় মধ্যপ্রাচ্যে লোক পাঠিয়ে থাকে এবং এক পর্যায় ভুক্তভোগীকে মধ্যপ্রাচ্যে নেওয়ার জন্য প্রস্তাব করে। ভুক্তভোগী বিশ্বাস স্থাপন করে তাদের কথায় রাজি হয়।
তিনি আরও জানান, গত ২৬ জুন তারা (মানব পাচারকারী) দুই জন সদস্য ভুক্তভোগীর দোকানে আসলে ভুক্তভোগী তার পাসপোর্ট প্রদান করে। তাদের দেওয়া ভিসা অনুযায়ী ভুক্তভোগী গত ২০১৮ সালের (৮নভেম্বর) কাতার হয়ে মধ্যপ্রাচ্যে গমন করে। সেখানে গমন করার পর সেখান থেকে নাজমুল ইসলাম (৪০)সহ অজ্ঞাতনামা ২/৩ জন তাদের (মানব পাচারকারী) দলের সদস্য ভুক্তভোগীকে রিসিভ করে ইরাকস্থ একটি ভবনের কক্ষে নিয়ে আটকে রাখে। ঐকক্ষে ভুক্তভোগীর মত আরো ২১ জন লোক ছিল। কক্ষে আটকে রেখে ভুক্তভোগীদেরকে শারীরিক নির্যাতনসহ ২/৩ দিন কিছু না খেতে দিয়ে বিভিন্ন রকমের কষ্ট দিতে থাকে এবং বাড়িতে ফোন করে আরো অর্থের দাবী করে। তাদের (মানব পাচারকারী) নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে ভুক্তভোগী আনুমানিক এক মাস পর গোপনে আটকে রাখা কক্ষ থেকে পালিয়ে যায় এবং বিভিন্ন লোকজনের সহায়তা নিয়ে বাংলাদেশ দুতাবাসের সাহায্যে বাংলাদেশে চলে আসে। তারা সম্প্রতি গ্রেফতারকৃত পাচার চক্রের মূল হোতা লিটন@ ডাক্তার লিটন (৪৫) এর সহযোগী বলে তারা স্বীকার করেছে। তাদের সাথে জড়িত অন্যান্য মানব পাচারকারীদের আইনের আওতায় আনার জন্য আমাদের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। আটককৃত মানব পাচারকারীদ্বয়ের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।