যোগাযোগের সুষ্ঠু ও অধিকতর নিরাপদ মাধ্যম হিসেবে রেলযাত্রা এখনো সবার কাছে সমান জনপ্রিয়। ট্রেনের নিরাপদ ও আনন্দদায়ক ভ্রমণের মধ্যেও হতাশার বিষয় আছে। আর তা হলো ট্রেনের ছাদে ওঠা। মানুষ বুঝে না বুঝেই ট্রেনের ছাদে ওঠে, যেটা মোটেই ঠিক নয়। ট্রেনের ছাদে ওঠার কারণে যাত্রীদের জীবন ঝুঁকিতে পড়ে যায়, পঙ্গুত্ব বরণের সম্ভাবনা থাকে কিংবা বিদ্যুত্স্পৃষ্ট হয়ে মারা যাওয়ার একটা আশঙ্কা থেকেই যায়।
১৮৯০ সালের রেলওয়ে আইনের ১২৯ নম্বর ধারা অনুযায়ী, যদি কোনো ব্যক্তি বিপজ্জনক বা বেপরোয়া কার্যের দ্বারা অথবা অবহেলা করে কোনো যাত্রীর জীবন বিপন্ন করে, তবে তার এক বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা জরিমানা কিংবা উভয় প্রকার দণ্ড হতে পারে। ছাদে ভ্রমণকারী এবং ভ্রমণে উত্সাহ ও সহযোগিতা প্রদানকারীও সমান অপরাধী। ছাদে ভ্রমণের কারণে দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা থাকে ব্যাপক। ছাদ থেকে পড়ে গিয়ে মৃত্যুর ঘটনাও শোনা যায়। পাশাপাশি ছাদে ভ্রমণের ফলে ট্রেন চলাচলে বিঘ্ন ঘটাসহ সরকারি মূল্যবান সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়া ছাদে ভ্রমণের কারণে গাছের সঙ্গে আঘাত লেগে ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। কেউ শখের বসে, কেউ টিকিট না পেয়ে, কেউ-বা বিনা টিকিটেই ভ্রমণ করার উদ্দেশ্যে ঝুঁকি নিয়ে ট্রেনের ছাদে ভ্রমণ করে। শুধু বিভিন্ন উত্সবের সময়ই ট্রেনের ছাদে ভ্রমণের বিষয়টি লক্ষ করা যায় তা কিন্তু নয়। সারা বছর লোকাল ট্রেনগুলোতে যাত্রীরা ছাদে ভ্রমণ করতে থাকে। কোনোভাবেই তাদের আটকে রাখা যাচ্ছে না। অনেক যাত্রী আসন না পাওয়ায় স্ট্যান্ডিং টিকিটের জন্য অপেক্ষা না করে ছাদে উঠে পড়ে। ট্রেনের ছাদে ভ্রমণ ছাড়াও ট্রেনের বাফারে ও ইঞ্জিনে অবৈধভাবে ভ্রমণ করে থাকে অনেক অসচেতন যাত্রীরা। পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ট্রেনের ছাদে ভ্রমণের প্রবণতা সবচেয়ে বেশি উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ট্রেনগুলোতে। রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চল বিভাগ এরকম ১২টি স্টেশন চিহ্নিত করেছে। স্টেশনগুলো হলো—জয়দেবপুর, বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম, ঈশ্বরদী, রাজশাহী, সান্তাহার, পার্বতীপুর, লালমনিরাহাট, বোনারপাড়া, বগুড়া, পঞ্চগড়, রংপুর ও দিনাজপুর। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্রেনের ছাদে ভ্রমণ ঠেকাতে কঠোর অবস্থান নিতে হবে কর্তৃপক্ষকে। কোনো অবস্থাতেই ছাড় দেওয়া যাবে না। জরিমানা ৫০ টাকার জায়গায় দিগুণ করতে পারলে কিছুটা হলেও যাত্রীদের ছাদে ওঠা থেকে বিরত রাখা যাবে। ট্রেনের ছাদে ভ্রমণের জন্য জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা, মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধি করতে পারলে এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সহজ হবে। বিভিন্ন সভা-সেমিনারের আয়োজন করতে হবে। প্রয়োজনে লিফলেট বিতরণ করতে হবে, মাইকিং করে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। সাধারণত দেখা যায়, অনেকে চলন্ত অবস্থায় ট্রেনের দরজা-জানালা দিয়ে ছাদে ওঠে। এই চর্চা মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। ট্রেনের ছাদে থাকা পানির ট্যাংকিতে মলমূত্রও করে থাকেন অনেক ছাদযাত্রী। এ ধরনের কর্মকাণ্ড জনসচেতনতা ছাড়া বন্ধ করা কঠিন। মানুষের অভ্যাস সহজে যায় না। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আইন থাকলেও অভ্যাসগত কারণে সেই আইনে তেমন ফল পাওয়া যায় না। আইন প্রয়োগের কঠোরতার পাশাপাশি মানুষের অভ্যাস পালটাতে হবে জনসচেতনতামূলক কর্মসূচির মাধ্যমে।