বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের জন্য আন্তর্জাতিক বাজার একটা বড় সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিচ্ছে। বিগত কয়েক বছরে একইসঙ্গে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশি ছবি মুক্তি পাওয়া শুরু করেছে। কানাডা, আমেরিকাসহ ইউরোপিয়ান বেশ কয়েকটি দেশে করোনার কারণে দীর্ঘ প্রায় ২ বছর সিনেমাহলগুলো বন্ধ থাকায় সারাবিশ্বে সিনেমা বিপণণের ক্ষেত্রে এক ধরনের শূন্যতা দেখা দিয়েছে। তবে এর মাঝে উপমহাদেশের চলচ্চিত্র থেকে শুরু করে ইউরোপ-আমেরিকান চলচ্চিত্রগুলো একাধিক ওটিটি প্লাটফর্মে রিলিজ দিয়ে তারা তাদের ইন্ডাস্ট্রি টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করেছে। কিন্তু বাংলাদেশে একাধিকবার চেষ্টা করেও বাংলা সিনেমাকে কেন্দ্র করে ওটিটি প্লাটফর্মের কোনো উদ্যোগ আজ অবধি সফল হয়নি।
গতবছর এফডিসির একাধিক সংগঠনের সমন্বয়ে বাংলা সিনেমা নিয়ে আলাদা একটি প্লাটফর্মের কথা চললেও পরে আর সেই আলোচনা খুব বেশিদূর গড়ায়নি।
এ প্রসঙ্গে প্রযোজক সমিতির নেতা খোরশেদ আলম খসরু বলেন, ‘আমাদের চলচ্চিত্রকে বাঁচাতে হলে নিজেদের সমন্বিত হয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। সঠিক জায়গায় সঠিক বিনিয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে। আমাদের রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ পর্যায়ের সকলে এ ব্যাপারে উত্সাহী হলেও আমরা গুছিয়ে উঠতে পারছি না।’
এই সমন্বয়হীনতার সংকট দীর্ঘ দিনের। তবে বিভিন্ন বড় বড় প্রতিষ্ঠান নিজ উদ্যোগে প্রায় কয়েকশ কোটি টাকা লগ্নি করে ওটিটির যাত্রা শুরু করেছে। এর ভেতরে চরকি নামের একটি প্লাটফর্ম অবমুক্ত হয়েছে।
ইমপ্রেস টেলিফিল্মসের সহ প্রতিষ্ঠান হিসেবে একটি ওটিটি প্লাটফর্ম বড় বিনিয়োগে মাঠে নেমেছে। প্রাণ আরএফএল-এর সহ প্রতিষ্ঠান হিসেবে ঝাক্কাস নামের ওটিটি বিশাল বিনিয়োগে বাংলা কন্টেন্ট নিয়ে কাজ শুরু করেছে, যারা খুব জলদিই গ্রাহকদের কাছে সরাসরি আসবে।
যদিও এসব প্রতিষ্ঠান বা ওটিটি প্লাটফর্মের কোনোটিই ডেডিকেটেটভাবে শুধু সিনেমা নিয়ে কাজ করছে না। তারা বিশ্ব বাঙালি দর্শকদের কথা চিন্তা করে নানা ধরনের কন্টেন্ট নিয়ে কাজ করছে। এদিকে বাংলাদেশের সিনেমা নিয়ে সরাসরি বিশ্ববাজারের একাধিক থিয়েটারে প্রদর্শনীসহ বিভিন্ন বিপণনের কাজ করছে স্বপ্ন স্কেয়ারক্রো, বায়োস্কোপ ফিল্মস’সহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। তবে প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলা সিনেমার বাজারকে প্রসারিত করার কাজটি যখনই একটু আধটু শুরু করে, ঠিক তখনই করোনার আঘাতে এই উদ্যোগ ভীষণভাবে ব্যাহত হয়। তবে আবারো তারা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। এখানেও সবচেয়ে বড় সংকট হলো-বাংলাদেশি সিনেমা নির্মাতা-কুশলী ও প্রতিষ্ঠানগুলো এখনো বিষয়গুলো ঠিক গুরুত্বসহকারে দেখছে না।
উল্লেখ্য, গত ২ বছরে প্রায় অর্ধশত চলচ্চিত্র নির্মিত হয়ে আছে, যা বাজারের অবস্থা ভালো না!-এই শঙ্কায় আর রিলিজ পায়নি। তাদের অধিকাংশ লগ্নিকারীরাই এখন হতাশা গুনছেন। তবে আশার খবর হলো সারাবিশ্বে সিনেমা হল, ফেস্টিভ্যাল থেকে শুরু করে সকল প্রক্রিয়া চালু হওয়ায় নতুন করে আবারো সরব হতে শুরু করেছে।
এ প্রসঙ্গে বায়োস্কোপ ফিল্মসের কর্ণধার রাজ হামিদ বলেন, ‘আমরা চাই অন্যান্য উন্নত দেশের মতো আমাদের সিনেমাও বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতা করুক। সেই কারণে নানা কৌশলে আমরা কাজ করছি। কারণ আমাদের সবচেয়ে বড় আশার কথা হলো সারাবিশ্বে সিনেমাপাগল বাঙালি প্রচুর রয়েছে। কিন্তু একটি সংকটের কথা বলতেই হয়, তা হলো সিনেমা সংশ্লিষ্ট তারকা-কুশলীদের আরো আন্তরিক ও আগ্রহী হতে হবে। নতুন একটা সম্ভাবনার দ্বার খুলছে। এখানে সবাই সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।’উল্লেখ্য প্রথমবারের মতো ‘মিশন এক্সট্রিম’ একইসঙ্গে ৩টি মহাদেশে মুক্তি পাচ্ছে। অন্যদিকে দেশের অন্যান্য ছবিগুলো নিয়েও কাজ করছে একাধিক প্রতিষ্ঠান। এ তালিকায় অমিতাভ রেজার বিদেশি প্রডাকশনের ছবি রিকশাগার্ল যেমন রয়েছে তেমনি মাসুদ হাসান উজ্জ্বলের ‘ঊনপঞ্চাশ বাতাস’ ছবিটিও রয়েছে।