নির্দলীয় সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনের দাবিতে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন কিংবা যুগপৎ আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রধান তিন শরিক দল গণফোরাম, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি ও নাগরিক ঐক্য। এ জন্য দলগুলোর নীতিনির্ধারকরা চাইছেন দ্রুত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে সক্রিয় করে তুলতে। অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গেও আলোচনা করার পরিকল্পনা করছেন তারা।
বিভিন্ন ইস্যুতে পৃথকভাবে রাজপথে সক্রিয় থাকার সিদ্ধান্তও রয়েছে তাদের।
তবে দল তিনটির নেতাকর্মীরা আন্দোলন কিংবা কর্মসূচি সফল করে তোলার মতো দলীয় সক্ষমতা আছে কিনা, তা নিয়েই প্রশ্ন তুলছেন। এমন প্রেক্ষাপটে সাংগঠনিক তৎপরতা বাড়ানোর পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ কোন্দলকে প্রশমিত করার উদ্যোগ নিচ্ছেন দলগুলোর নীতিনির্ধারকরা। উদ্যোগ নিচ্ছেন ঐক্যফ্রন্টকে সক্রিয় করে তোলার।
প্রসঙ্গত, এর মধ্যে ড. কামাল হোসেনের গণফোরাম কোন্দলে বিভক্ত। রাজনীতির মাঠে অনেকটা নিষ্প্রভ জেএসডি। মাহমুদুর রহমান মান্নার নেতৃত্বাধীন নাগরিক ঐক্য রাজনৈতিকভাবে তৎপর থাকলেও এর সাংগঠনিক ব্যাপ্তি এখনও সীমিত।
গণফোরাম: কোন্দলে বিভক্ত গণফোরামের দুই অংশই নিজেদের শক্তি বাড়াতে কাজ করছে। ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন অংশটি আগামী ৪ ডিসেম্বর জাতীয় কাউন্সিল করার ঘোষণা দিয়েছে। এ লক্ষ্যে তারা পুরোদমে কার্যক্রম শুরু করেছেন। অন্যদিকে, দলটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মোহসীন মন্টুর নেতৃত্বাধীন নেতারা সারাদেশ সফর করে তৃণমূল নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করছেন। তারাও পৃথক কাউন্সিল করার পরিকল্পনা নিয়েছেন। এ মাসেই দলের কেন্দ্রীয় কমিটির বর্ধিত সভা করে আনুষ্ঠানিকভাবে তারা এ কাউন্সিল করার ঘোষণা দিতে পারেন।
দলের দুই অংশ দুই মেরুতে অবস্থান নেওয়ার মধ্য দিয়ে স্পষ্টতই বিভক্ত হয়ে পড়েছেন গণফোরামের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। দুর্বল হয়ে পড়েছেন সাংগঠনিকভাবেও। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর দলটিকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করার কোনো উদ্যোগ দেখেননি পর্যবেক্ষকরা। বরং এ সময়ে নিষ্ফ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন অনেক নেতা। নির্বাচনের আগে গণফোরামে যোগ দেওয়া ড. রেজা কিবরিয়া দল ছেড়েছেন। প্রতিষ্ঠাকালীন অনেক নেতা রাজনীতিবিমুখ হয়ে আছেন।
তবে উভয় অংশের নেতারাই মনে করেন, গণফোরামের অভিভাবক ড. কামাল হোসেন উদ্যোগ নিলে দুই অংশকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারবেন। তারা এখনও তার নির্দেশনার অপেক্ষায় আছেন।
মোস্তফা মোহসীন মন্টু বলেন, দেশে এখন কোনো গণতন্ত্র নেই, মানুষের ভোটাধিকার নেই। রাতের অন্ধকারে ভোট করে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে। জনগণের মালিকানা জনগণকে ফিরিয়ে দিতে আন্দোলনের বিকল্প নেই। আমরা দলকে সংগঠিত করছি। সারাদেশ সফর করছি। জোটবদ্ধ বা যুগপৎ আন্দোলনের জন্য নেতাকর্মীদের প্রস্তুত করছি।
জেএসডি: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনে অন্যতম ভূমিকা পালনকারী এ দলটি নির্বাচনে কোনো আসনে জয়ী হতে পারেনি। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে কাউন্সিলকে কেন্দ্র করে বিভক্তি আসে জেএসডিতে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দলের তখনকার সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক রতনসহ জেএসডির কয়েকজন শীর্ষ নেতা পাল্টা জাতীয় কনভেনশনের ডাক দেন। এই কনভেনশন পরে আর হয়নি। কিন্তু এখনও অনেকে দলের বাইরে রয়েছেন।
করোনাকালীন জেএসডির কার্যক্রম পুরোপুরিই স্তিমিত ছিল। এর মধ্যে দলের সভাপতি আ স ম আবদুর রব ও তার স্ত্রী তানিয়া রব দীর্ঘ চার মাস যুক্তরাষ্ট্রে ছিলেন। সম্প্রতি তারা দেশে ফিরেছেন। এখন থেকে দলের সাংগঠনিক তৎপরতা পুরোদমে শুরু হবে বলে জানিয়েছেন নেতাকর্মীরা। চলতি মাসে মহানগর জেএসডিকে আরও শক্তিশালী করার উদ্যোগ নেওয়ার পাশাপাশি আগামী ৩১ অক্টোবর দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া রাজনীতির মাঠে ইস্যুভিত্তিক বিভিন্ন কর্মসূচিও পালন করা হবে বলে জানিয়েছেন দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামালউদ্দিন পাটোয়ারি।
জেএসডির সহসভাপতি তানিয়া রব বলেন, দলকে শক্তিশালী করতে ইতোমধ্যে মাসব্যাপী কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন শুরুর লক্ষ্যে অন্যান্য রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও পেশাজীবী বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানো হচ্ছে। কারণ, এ ধরনের সরকার হটানোর জন্য বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য ছাড়া বিকল্প নেই। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন করার আন্দোলন তারা অব্যাহত রাখবেন।
নাগরিক ঐক্য: জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক নাগরিক ঐক্য বিভিন্ন ইস্যুতে রাজনীতির মাঠে সরব রয়েছে। তবে নির্বাচন কমিশন থেকে নিবন্ধন না পাওয়ায় আগামী নির্বাচনেও দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করতে পারছে এ দল। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে সক্রিয় করে তোলার বিষয়ে দলটির নেতাদের সংশয় রয়েছে। তবে তারা মনে করেন, নতুন কোনো প্ল্যাটফর্ম নিশ্চয়ই গড়ে উঠবে। সেই ঐক্যবদ্ধ প্ল্যাটফর্ম তৈরি না হওয়া পর্যন্ত গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে যুগপৎ অংশগ্রহণের পরিকল্পনা রয়েছে এ দলটির নেতাদের। দলকে শক্তিশালী করতেও নানা উদ্যোগ নিয়েছে নাগরিক ঐক্য।
দলটির শীর্ষ নেতা মাহমুদুর রহমান মান্নার সঙ্গে ব্যক্তিগত পর্যায়েও বিএনপি ও এর বিভিন্ন অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সম্পর্ক ভালো। বিএনপি নেতাকর্মীরা তাকে তাদের বলয়ের একজন ভালো বক্তা ও বিএনপির শুভাকাঙ্ক্ষী মনে করেন। এমন ভাবনা ও অবস্থান দুই দলের ঐক্যকে ভবিষ্যতে আরও সুদৃঢ় করবে বলে মনে করছেন উভয় দলের নেতাকর্মীরা।
২০১২ সালের ১ জুন রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে নাগরিক সংগঠন হিসেবে এবং ২০১৭ সালের ২ জুন জাতীয় প্রেস ক্লাবে রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশের ঘোষণা দেয় ‘নাগরিক ঐক্য’। আগামী এক বছরের মধ্যে তাদের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সংগঠন গুছিয়ে ঢাকায় সম্মেলনের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটিকে পূর্ণাঙ্গ করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানা গেছে।
নেতাকর্মীরা জানান, সবগুলো বিভাগীয় শহরেই এখন নাগরিক ঐক্যের কমিটি আছে। দেশের অন্তত এক-তৃতীয়াংশ জেলায় এর নেতাকর্মীরা সক্রিয়। এই জেলা কমিটিগুলোর আওতায় উপজেলা এবং থানা পর্যায়েও দলটি সক্রিয়। রাজনৈতিক দল হিসেবে কার্যক্রম শুরুর পর কয়েকটি সহযোগী সংগঠনও গড়ে তুলেছে নাগরিক ঐক্য। এসব সংগঠনের ব্যানারে বিভিন্ন ইস্যুভিত্তিক কর্মসূচিও পালন করা হচ্ছে।
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ৯ বছর আগে রাজনীতির প্রচলিত ধারার বাইরে তৃতীয় ধারার রাজনীতি শুরু করি আমরা। দেশবাসী বিষয়টিকে খুব ইতিবাচক হিসেবে নিয়েছে। বর্তমানে সারাদেশে ৪০টির মতো জেলা ও ১৭০টির মতো সক্রিয় থানা কমিটি রয়েছে। দেশে এখন রাজনীতি করার নূ্যনতম সুযোগ নেই। এ অবস্থায় বড় ঐক্য প্রয়োজন। ঐক্যবদ্ধ প্ল্যাটফর্ম কিংবা যুগপৎ, যে কোনোভাবেই সেটা হতে পারে। সবাই এ বিষয়ে সম্মতিও পোষণ করেছেন। দেশবাসীও রাজপথে নামার অপেক্ষায় রয়েছে।
আমাদের সম্পর্কে
প্রকাশক ও সম্পাদক: ড. শাহজাহান মজুমদার, ব্যবস্থাপনা সম্পাদকঃ জি.এম ফারুক হোসেন
অফিস : সম্পাদকীয় কার্যালয় : ৯০/এ মুকুল টাওয়ার (৭ম তলা), নিউ সার্কুলার রোড, সিদ্ধেশ্বরী, ঢাকা-১২১৭।
প্রকাশক কর্তৃক ১৫৮/১, উত্তর বাসাবো থেকে প্রকাশিত এবং মেসার্স টাঙ্গাইল ।
আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন: Email- ekusheysangbad@gmail.com .
মোবাঃ ০১৭৩০-২৫৭০২৯, বিজ্ঞাপন-০১৭৩৩-৪৪৫৮৫৬