ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জুমচাষীদের চোখে-মুখে এখন আনন্দ। পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের সনাতনী কৃষি হচ্ছে পাহাড়ের ঢালে জুমচাষ। জুমচাষের প্রস্তুতিকালে প্রথমে ফাল্গুন-চৈত্র মাসে আগুনে পুড়িয়ে জুমচাষের জন্য জমিকে উপযুক্ত করে তোলা হয়। এরপর বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে প্রস্তুতকৃত পোড়া জুমের মাটিতে দা দিয়ে গর্ত খুঁড়ে একসাথে ধান, মারফা, মিষ্টি কুমড়া, তুলা, তিল ও ভুট্টাসহ ইত্যাদি বীজ বপন করেন জুমিয়ারা (জুমচাষীরা)।
আষাঢ়-শ্রাবণ মাসেই জুমের ধান পাকা শুরু হয়। ভাদ্র-আশ্বিন মাসে ঘরে তোলা হয় জুমের ফসল।
জুমচাষীরা জানান, অন্যান্য বছরের তুলনায় চলতি বছর জুমের ফসল ভালো হয়েছে। দীর্ঘ কয়েক মাস পরিশ্রম করে তারা এবার ভালো ফসল পেয়েছে এবং জুম ধানের পাশাপশি মিষ্টি কুমড়া, তিল, আদা, হলুদ, ভুট্টা, শিম, মারফা, কাকন, মরিচ ও তুলাসহ নানা প্রকার শাক-সবজি চাষ করা হয়েছে। সময় মতো ফসল ঘরে তুলতে পারলে পুরো বছর অনায়াসে কেটে যাবে এমনটাই আশা চাষীদের। আর খাদ্য সঙ্কটে ভুগতে হবে না তাদের।
রাঙ্গামাটি কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক কৃষ্ণ প্রসাদ মল্লিক জানান, পাহাড়ে জুমিয়ারা স্থানীয় জাতের ধানের পাশাপাশি সাথী ফসলের আবাদ করায় ধান ও সবজির ভালো ফলন পাওয়া যাচ্ছে। এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ও সঠিক বৃষ্টিপাতের কারণে জুমের ফলন ভালো হয়েছে। তবে জুমে কিছু উচ্চফলনশীল ধান কৃষকদের পরিচয় করিয়ে দিতে পারলে কৃষকরা হয়তো ধানের ফলন বেশি পাবে। তবে এ বছর ধানের পাশাপাশি অন্যান্য সবজিও ভালো হয়েছে।
এ বছর জুমের ভালো ফলন হওয়াতে কৃষি বিভাগ এ অঞ্চলে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সক্ষম হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
রাঙ্গামাটি কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয়ের উপ-পরিচালক (শষ্য) আপ্রু মার্মা বলেন, চলতি বছর শুধু রাঙ্গামাটি জেলায় জুম চাষ হয়েছে ৫ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে। যার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে হেক্টর প্রতি ১ দশমিক ৩০ টন। আর বর্তমানে যে উৎপাদন পাওয়া যাচ্ছে তা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি।
তিনি জানান, দীর্ঘ কয়েক মাস পরিশ্রমের ফলে ও জুমে সঠিকভাবে চাষীরা সার প্রয়োগ করায় এবার ফলন ভালো হয়েছে। আর পাহাড়ে জুমিয়ারা স্থানীয় জাতের ধানের পাশাপাশি উচ্চফলনশীল ধান ও সবজির আবাদ করতে চাষীদের পরামর্শসহ যাবতীয় সুবিধা দিচ্ছে রাঙ্গামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর।
ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীগুলোর এই ঐতিহ্যবাহী জুমচাষ পদ্ধতিকে আধুনিকায়ন ও জুমচাষীদের ব্যাংকঋণের ব্যবস্থা করলে জুমে আরো উৎপাদন বৃদ্ধি পেতে পারে। এতে করে একদিকে এ অঞ্চলের খাদ্যের ঘাটতি পূরণ হতো, সেইসাথে প্রান্তিক জুমচাষীদের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব হতে পারে বলে মনে করছেন কৃষি সংশ্লিষ্টরা।