• মঙ্গলবার, ২৫ মার্চ ২০২৫, ১০:২১ অপরাহ্ন
শিরোনাম
চট্টগ্রাম লালখান বাজার টাংকি পাহাড়ে আগুন ইন্দোনেশিয়ার আগ্নেয়গিরি যেখানে আগুন নীল! কাওয়া আইজেনের অবিশ্বাস্য রহস্য এপ্রিলেই ৩১ লাখের বেশি শিক্ষার্থী স্কুল ফিডিংয়ের আওতায় আসছে : প্রাথমিক বিদ্যালয় মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টে নিয়মিত বাংলাদেশ প্রসঙ্গ, যা বললেন ট্যামি ব্রুস উপত্যকায় ভয়াবহ হামলায় মৃত্যুর আগে আল-জাজিরার সাংবাদিকের আবেগঘন বার্তা : ইসরায়েলি  বিশ্বজুড়ে নতুন বার্ড ফ্লু থেকে নতুন মহামারীর সম্ভাবনা, বিজ্ঞানীদের সতর্কবার্তা মানবিক সহায়তা হ্রাসের ফলে আরো শিশু মারা যেতে পারে : জাতিসংঘ দক্ষিণ দ্বীপে ৬.৭ মাত্রার ভূমিকম্প : নিউজিল্যান্ডের  আমিই গোল করব, আর্জেন্টিনাকে হারাব ; রাফিনিয়ার হুঙ্কার ভারতকে হারাতে চান জামাল ভূঁইয়ারা : এএফসি এশিয়ান কাপ

ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের পরও বুয়েটে কমিটি করেছে ছাত্রদল, ভাঙেনি ছাত্রলীগ

অনলাইন ডেস্ক / ৪৫৯ Time View
Update : বৃহস্পতিবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০২১

কমিটি দিয়েছে ছাত্রদল

ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ থাকলেও গত বছরের ২৪ জুলাই করোনা পরিস্থিতির মধ্যেই বুয়েটে সাংগঠনিক কমিটি ঘোষণা করে বিএনপির ছাত্রসংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। আসিফ হোসেনকে আহ্বায়ক, আলী আহমদকে সদস্যসচিব ও ফয়সাল নূরকে যুগ্ম আহ্বায়ক করে গঠিত সেই কমিটির দুই সদস্য হলেন নওরোজ রহমান ও মুসাওয়ার আহমেদ। তাঁরা সবাই বুয়েটের সাবেক শিক্ষার্থী। ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেছেন, বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত তাঁরা মানেন না। আবরার ফাহাদ হত্যার দৃষ্টান্তমূলক বিচার এবং ৫ দফা দাবি আদায়ে বুয়েটে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এই কমিটি ঘোষণার পর শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে কমিটিতে থাকা ব্যক্তিদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় বুয়েট কর্তৃপক্ষ। নোটিশের জবাবে কেউ বলেছেন যে তাঁরা বুয়েটের বর্তমান শিক্ষার্থী নন, কেউ আবার বলেছেন যে সম্মতি ছাড়াই তাঁদের ছাত্রদলের কমিটিতে পদ দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে বুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালক (ডিএসডব্লিউ) অধ্যাপক মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছাত্রদলের কমিটিতে যাঁরা আছেন, তাঁরা কেউই বুয়েটের বর্তমান শিক্ষার্থী নন। ফলে তাঁদের বিষয়ে আমাদের করণীয় কিছু নেই। আমরা বলতে পারি, সাংগঠনিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত এখনো কার্যকর আছে। বুয়েট ক্যাম্পাসে তাঁরা কোনো কার্যক্রম চালাতে পারবেন না। ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে আমাদের প্রচেষ্টা আছে, রাজনৈতিক সংগঠনগুলোকেও এ ক্ষেত্রে সহায়তা করতে হবে।’

ছাত্রলীগ কমিটি ভাঙেনি

আবরার হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে ২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর ১১ নেতাকে ছাত্রলীগ থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হয়। আবরার হত্যার পর থেকে বুয়েটে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এই ছাত্রসংগঠনের কোনো ধরনের কার্যক্রম নেই। কিন্তু এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে বুয়েট কমিটি ভাঙেনি ছাত্রলীগ। সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘ছাত্ররাজনীতির নেতিবাচক দিকগুলোকে বিদায় করার দাবি উঠতে পারে, কিন্তু ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক।’ একাধিক শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাংগঠনিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে বুয়েট কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত কঠোর অবস্থানে রয়েছে। আবরার হত্যাকাণ্ডের পর এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে সাত মাসের মতো বুয়েটের হল খোলা ছিল। এরপর করোনা পরিস্থিতির কারণে দীর্ঘদিন শিক্ষার্থীরা হলে ছিলেন না। গত ১০ নভেম্বর থেকে হলগুলো খুলে দেওয়া হয়েছে।

‘আপাতত মনে হচ্ছে, বুয়েটের ভেতরের পরিস্থিতি ভালো’

আবরার হত্যার পর বুয়েটে শিক্ষার্থীদের যে আন্দোলন হয়, সেখানে শিক্ষার্থীদের অন্যতম মুখপাত্র ছিলেন তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের ছাত্র মাহমুদুর রহমান (সায়েম)। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের পর বুয়েটে মাত্র তিন সপ্তাহ ক্লাস-পরীক্ষা হয়। জানুয়ারিতে পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর প্রায় তিন সপ্তাহ ছুটি ছিল। এরপর ফেব্রুয়ারিতে ক্লাস শুরু হয়। দু-তিন সপ্তাহ ক্লাস হওয়ার পর করোনা পরিস্থিতির কারণে মার্চে বুয়েট বন্ধ হয়ে যায়। ফলে আবরার হত্যাকাণ্ডের পর খুব বেশি সময় শিক্ষার্থীরা হলে ছিলেন না। তাই নির্যাতনের বিষয়ে এখনই চূড়ান্ত কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে স্বল্প সময়ে আমরা যা দেখছি বা শুনছি, নির্যাতনের কোনো ঘটনা নেই। ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করার বিষয়টি খুব শক্তভাবেই নিশ্চিত করা হয়েছে। আপাতত মনে হচ্ছে যে বুয়েটের ভেতরের পরিস্থিতি ভালো।’

তৈরি হয়েছে বিকল্প কৌশল

বুয়েটের ডিএসডব্লিউ মিজানুর রহমান মনে করেন, কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে মূলত শিক্ষার্থীদের সমস্যা-সংকটের কথাগুলো জানার জন্য ছাত্ররাজনীতি প্রয়োজন হয়। এ জন্য বুয়েটে ছাত্ররাজনীতির বিকল্প কৌশল তৈরি করা হয়েছে বলে জানালেন তিনি। তাই আপাতত বুয়েটে ছাত্র সংসদ সচল করার কথাও ভাবছেন না তাঁরা। মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছাত্র সংসদ সচল করতে গেলে আমাদের দেশে যে প্র্যাকটিস, সে অনুযায়ী ব্যক্তিগতভাবে কেউ কোনো নির্বাচন করেন না। তখন দেখা যাবে, বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে আবার কার্যক্রম শুরু হবে। ফলে সাংগঠনিক ছাত্ররাজনীতি ফিরে আসার একটি সম্ভাবনা তৈরি হবে।’ বুয়েটে ছাত্ররাজনীতির বিকল্প কৌশল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের সমস্যা-সংকটের কথা জানার জন্য প্রতিটি বিভাগে প্রতি ব্যাচে শ্রেণি প্রতিনিধি আছেন। তাঁদের মাধ্যমে আমরা প্রশাসনিক সমস্যাগুলোর কথা জানতে পারি। অন্যদিকে আবাসিক হলে কোনো সমস্যা থাকলে তা দেখার জন্য হল প্রাধ্যক্ষরা আছেন। মাসে অন্তত এক বা দুবার প্রাধ্যক্ষরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বসেন। সেখানে শিক্ষার্থীদের বক্তব্যগুলো জানতে পারেন। এ ছাড়া বুয়েটে ৩১টি নানা ধরনের ক্লাব আছে। এসব ক্লাবের কার্যক্রমের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বগুণ বিকাশের সুযোগও রয়েছে।’ আবরার হত্যার বিচারসহ বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলনের একপর্যায়ে ২০১৯ সালের ১৪ নভেম্বর ক্লাস-পরীক্ষায় ফিরতে প্রশাসনকে শিক্ষার্থীরা তিন দফা দাবি পূরণের শর্ত দেন। দাবিগুলো মানতে ১৮ নভেম্বর শিক্ষার্থীদের কাছে সর্বোচ্চ তিন সপ্তাহ সময় চান বুয়েটের তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম। বুয়েট শিক্ষার্থীদের ওই তিন দফা দাবি ছিল: আবরার হত্যা মামলার অভিযোগপত্রের ভিত্তিতে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বুয়েট থেকে স্থায়ী বহিষ্কার; বুয়েটের আহসানউল্লাহ, তিতুমীর ও সোহরাওয়ার্দী হলে আগে ঘটে যাওয়া র‍্যাগিংয়ের ঘটনাগুলোয় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী শাস্তি এবং সাংগঠনিক ছাত্ররাজনীতি ও র‍্যাগিংয়ের জন্য সুস্পষ্টভাবে বিভিন্ন ক্যাটাগরি ভাগ করে শাস্তির নীতিমালা প্রণয়নের পর একাডেমিক কাউন্সিল ও সিন্ডিকেটে অনুমোদন করে বুয়েটের অধ্যাদেশে সংযোজন। শিক্ষার্থীদের প্রথম দাবি অনুযায়ী সেই বছরের ২১ নভেম্বর শেরেবাংলা হলের ২৬ ছাত্রকে বুয়েট থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হয়। দ্বিতীয় দাবি অনুযায়ী ২৮ নভেম্বর র‍্যাগিংয়ে অভিযুক্ত আহসানউল্লা ও সোহরাওয়ার্দী হলের ২৬ ছাত্রকে হল থেকে বহিষ্কার করে কর্তৃপক্ষ এর মধ্যে দুই হলের ৯ ছাত্রকে হল থেকে আজীবন বহিষ্কারের পাশাপাশি একাডেমিক কার্যক্রম থেকে ৪ থেকে ৭ টার্ম পর্যন্ত বহিষ্কার করা হয়। এ ছাড়া আহসানউল্লা হলের চার ছাত্রকে সতর্ক করা হয় আর সোহরাওয়ার্দী হলের ১৭ শিক্ষার্থীকে হল থেকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার ও ভবিষ্যতের জন্য সতর্ক করা হয়। ২ ডিসেম্বর সাংগঠনিক ছাত্ররাজনীতি ও র‍্যাগিংয়ের শাস্তিবিষয়ক নীতিমালা প্রকাশ করে বুয়েট কর্তৃপক্ষ ১০ ডিসেম্বর র‌্যাগিংয়ের ঘটনায় তিতুমীর হলের আট শিক্ষার্থীকে হল থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়। এ ছাড়া ছয় শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে হল থেকে বহিষ্কার করা হয় এবং এক ছাত্রকে ভবিষ্যতের জন্য সতর্কও করা হয়। দাবি পূরণ হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ২৮ ডিসেম্বর থেকে চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ নেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category

ফেসবুকে আমরা