• মঙ্গলবার, ১২ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৪৪ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম
‘একস্ট্রাঅর্ডিনারি আরব অ্যান্ড ইসলামিক সামিট’ : বাংলাদেশের নেতৃত্বে তৌহিদ হোসেন শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণে যুক্তরাজ্যের সহায়তা চেয়েছেন রিজওয়ানা সরকারের তিন মাস পূর্তি : তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উল্লেখযোগ্য অর্জন আজারবাইজানের বাকুতে পৌঁছেছেন প্রধান উপদেষ্টা উ. কোরিয়া ও রাশিয়ার প্রতিরক্ষা চুক্তি আইনে পরিণত প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদায় তিন বিশেষ সহকারী নিয়োগ মাঠে নামতেই পারলেন না আ. লীগ, জিরো পয়েন্টে দিনভর যা হলো কপ-২৯ সম্মেলনে যোগ দিতে আজ আজারবাইজান যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা উপদেষ্টাদের দায়িত্বে রদবদল পর , কে কোন মন্ত্রণালয়ে বাসস পরিচালনা বোর্ডের চেয়ারম্যান হলেন ইত্তেফাকের যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ার আলদীন

অসুস্থ বাবার সামনে ছেলেকে জুতার বাড়ি, সইতে না পেরে বাবার মৃত্যু

Reporter Name / ৩৯২ Time View
Update : শনিবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০২১

ঝিনাইদহের মহেশপুরে অসুস্থ বাবার সামনে এক তরুণকে নিজের মুখে জুতার বাড়ি দিতে বাধ্য করার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে। আর এমন দৃশ্য সহ্য করতে না পেরে মারা গেছেন ওই অসুস্থ বাবা।

ভুক্তভোগী ওই তরুণের নাম এস এম সরকার ওরফে হোসেন সরকার। তিনিও ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি মো. আরিফুজ্জামান বিপাসের পা ধরেও ক্ষমা চাইতে হয়েছে ওই তরুণকে। এই দৃশ্য দেখে হতবাক হয়ে পড়েন হাসপাতালের চিকিৎসাধীন বাবা গিয়াস উদ্দিন সরকার। ৮ ডিসেম্বর মহেশপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এ ঘটনা ঘটে। হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে সেখানে ভর্তি হয়েছিলেন গিয়াস উদ্দিন (৬২)। নিজ সন্তানের গায়ে জুতার আঘাতের দৃশ্যের স্মৃতি নিয়েই যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল শুক্রবার বিকেলে তার মৃত্যু হয়। এস এম সরকার ওরফে হোসেন সরকার বাড়ি মহেশপুর উপজেলার যাদবপুর গ্রামে। মুখে জুতা মারার ঘটনার পর দুঃখ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এস এম সরকার লিখেছিলেন, ‘মানুষ কখন আত্মহত্যা করে?’ বাবার মৃত্যুর পর তিনি কথা বলার ভাষাও হারিয়ে ফেলেছেন। শুধু বলছেন, ‘ওরা আমাকে জুতা মারতে বাধ্য করার কারণে অসুস্থ বাবা খুব কষ্ট পেয়েছেন, যে কারণে তাঁকে বাঁচানো গেল না।’ তবে জুতা মারার ঘটনা সরাসরি অস্বীকার করেননি ছাত্রলীগ নেতা আরিফুজ্জামান। তবে ঘটনা নিয়ে তার ভাষ্য, তারা ওই কর্মীর অসুস্থ বাবাকে হাসপাতালে দেখতে গিয়েছিলেন। এ সময় এস এম সরকার দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘এত দিন আপনাদের সঙ্গে বিরোধ করে এসেছি, অথচ আপনারা আমার বাবাকে দেখতে এসেছেন। আমি এত দিন ভুল করেছি, এর জন্য ক্ষমা চাচ্ছি।’ ছাত্রলীগ নেতা আরও দাবি করেন, ওই কর্মী নিজেই তাকে জুতা দিয়ে মারতে বলেন। তখন তিনি নিজে না মেরে পা থেকে জুতা খুলে এগিয়ে দেন। তখন তিনি নিজেই জুতা মারেন। এস এম সরকারের ভগ্নিপতি মোমিনুর রহমান বলেন, এস এম সরকার ছাত্রলীগ করেন। মাঝে কিছুদিন ঢাকায় ছিলেন। অল্প দিন হলো বাড়িতে এসেছেন। তিনি ছাত্রলীগের একটি গ্রুপের বিপক্ষে ছিলেন। দুই পক্ষ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা লেখালেখি করে। এই লেখালেখি নিয়ে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আরিফুজ্জামান ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন। মোমিনুর রহমান বলেন, তাঁর শ্বশুর গিয়াস উদ্দিন সরকার ৭ ডিসেম্বর হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মহেশপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন ছিলেন এবং কিছুটা সুস্থতার দিকে যাচ্ছিলেন। হাসপাতালে বাবার পাশে ছিলেন ছেলে এস এম সরকার। সেখানে তাঁর মা মোছা. খাদিজা খাতুনও উপস্থিত ছিলেন। এক দিন পর ৮ ডিসেম্বর রাতে ছাত্রলীগ নেতা আরিফুজ্জামান বিপাস তিন-চারজন অনুসারী নিয়ে সেখানে যান। তারা এস এম সরকারকে পেয়ে অসুস্থ বাবা ও পাশে থাকা মায়ের সামনেই তার ওপর চড়াও হন। ফেসবুকে নানা কথা লেখার প্রসঙ্গ তুলে চাপ সৃষ্টি করেন। এ সময় এস এম সরকার তাদের আক্রমণাত্মক পরিস্থিতি দেখে ক্ষমা চান। একপর্যায়ে পায়ে ধরেও ক্ষমা ভিক্ষা চান। এরপরও ছাত্রলীগ সভাপতি নিজের পায়ের জুতা খুলে এগিয়ে দেন। হুকুম দেন নিজের মুখে জুতার বাড়ি মারতে। উপায় না দেখে এস এম সরকার নিজের মুখে জুতা দিয়ে বাড়ি মারেন। মোমিনুর রহমান বলেন, এই ঘটনার পর তার শ্বশুর মানসিক কষ্টে আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন। তারা কাছে গেলে শুধু প্রশ্ন করতে থাকেন, কেন ছেলেকে দিয়ে নিজের মুখে জুতার বাড়ি দেওয়ানো হলো। তার ছেলে কী অপরাধ করেছেন? কিন্তু তিনি কোনো উত্তর খুঁজে পাননি, ছেলেও বাবার প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি। এই অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন গিয়াস উদ্দিন। তখন তারা যশোর সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে তিনি মারা যান। কথা বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়ে মোমিনুর রহমান বলেন, ছেলের ওপর এই নির্যাতন সইতে না পেরেই তিনি চিরদিনের মতো চলে গেলেন। তারা এই ঘটনার বিচার চান। এস এম সরকার সরকার বলেন, ‘জুতা মারার দৃশ্যটি দেখলেই বুঝতে পারবেন, আমার ওপর কী অত্যাচার করা হয়েছে।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে পারেননি, শুধু কান্নাকাটি করেছেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category

ফেসবুকে আমরা