পর্দার কোনও প্রেমই সফল হত না দিলীপ কুমারের। সব সিনেমাতে থাকত বিষাদের ছায়া। তবে ব্যক্তিগত জীবন তার পুরোটাই উল্টো। পাঁচ দশকের সঙ্গী সায়রা বানু তার স্বামীর মৃত্যুশয্যার পাশে ঠায় বসে থেকেছেন। দিলীপ কুমারের অভিনয় জগতে হাতে খড়ি শুরু ৪০-এর দশকে। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। চুটিয়ে অভিনয় করেছেন। ৯০-এর দশকেও পর্দা কাঁপিয়েছেন এই সুপারস্টার। ১৯৯৮ সালে ‘কিলা’ ছবিতে শেষ অভিনয় তার। পরিচালনা করেছেন ‘গঙ্গা যমুনা’, ‘কলিঙ্গ’, ‘দিল দিয়া দর্দ লিয়া’-র মতো সিনেমা। পাকিস্তানে জন্ম দিলীপ কুমারের অর্থাৎ ইউসুফ খানের। হিন্দি ছবিতে কাজ করার জন্য নিজের নাম পরিবর্তন করেছিলেন তিনি। একইসঙ্গে হিন্দি, ঊর্দু, মরাঠি, পঞ্জাবি, বাংলা, ইংরেজি, পার্সির মতো একাধিক ভাষায় দখল ছিল তার। পর্দার নায়িকাদের সঙ্গে কালজয়ী প্রেমের উদাহরণ দিলীপ কুমার নিজেই। ‘তারানা’ সিনেমার শ্যুটিং করতে গিয়ে নায়িকা মধুবালার প্রেমে পড়েন দিলীপ। সাত বছর সম্পর্কে ছিলেন তারা। সেই সম্পর্ক ভেঙে যায় তার পর। ১৯৪৮ সালে ‘শহিদ’ ছবিতে দিলীপের বিপরীতে অভিনয় করেন কামিনী কৌশল। শ্যুটিং করতে করতেই প্রেম। সেই সময়ে কামিনী-দিলীপের সম্পর্ক নিয়ে অনেক চর্চা হয়েছিল। কিন্তু সেই সম্পর্কও পরিণতি পায়নি। ১৯৫০ সালে বৈজয়ন্তীমালার সঙ্গে ফের সম্পর্কের গুজব ওঠে দিলীপের। একাধিক ছবিতে তার সঙ্গে জুটি বেঁধেছিলেন দিলীপ। নায়িকাদের সঙ্গে পর্দায় প্রেম নিয়েও তিনি এতটাই নিষ্ঠাবান ছিলেন যে এমনই একটি কারণে নার্গিসের সঙ্গে কাজ করতে রাজি হননি তিনি। ‘মাদার ইন্ডিয়া’ ছবি প্রত্যাখ্যান করার পিছনে কারণ জানিয়েছিলেন দিলীপ নিজেই। তার বক্তব্য, ‘মেলা’, ‘বাবুল’-এর মতো ছবিতে নার্গিসের সঙ্গে প্রেম করার পরে ‘মাদার ইন্ডিয়া’-তে নার্গিসের ছেলের ভূমিকায় অভিনয় করাটা তার কাছে হাস্যকর বলে মনে হয়েছিল। ১৯৬৬ সালে ২২ বছরের ছোট সায়রা বানুকে বিয়ে করেন দিলীপ কুমার। সায়রা বানু পরে বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ১২ বছর বয়স থেকে পর্দায় দেখা দিলীপ কুমারের প্রেমে পাগল ছিলেন তিনি। ১৬ বছরের সায়রা ‘মুঘল-এ-আজম’ ছবির প্রিমিয়ারে গিয়েছিলেন প্রিয় নায়ককে এক বার চোখের দেখা দেখতে। কিন্তু কাজে ব্যস্ত থাকায় দিলীপ নিজেই প্রিমিয়ার যেতে পারেননি। কিন্তু সেই সায়রা বানুর উপস্থিতিতেই ১৯৮১ সালে দ্বিতীয় বিয়ে করেন ‘ট্র্যাজেডি কিং’। দ্বিতীর স্ত্রীর নাম আসমা সাহিবা। দু’বছর পরে সেই বিয়ে ভেঙে যায়। ২০২১ সালের ৩০ জুন শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন দিলীপ কুমার। এরপর ৭ জুলাই সব সিনেমাপ্রেমীকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে চলে যান দিলীপ কুমার।