হলুদ ফুলে ছেয়ে গেছে রংপুর অঞ্চলের বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ। তিস্তা ব্রক্ষপুত্র নদী তীরবর্তী চরাঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকায় এ বছর সরিষার চাষ হয়েছে বেশি। দু’চোখ যতদূর যায় প্রকৃতির সবুজ ফ্রেমে হলুদে ভরে উঠেছে আবাদি জমিগুলো। ভালো দামের আশায় সরিষা ক্ষেত পরিচর্যায় এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন তিস্তাপাড়ের চাষিরা।কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী রংপুর অঞ্চলের পাঁচ জেলায় এ বছর ৮৩ হাজার ১৬১ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ করা হয়েছে। গত বছর রংপুর অঞ্চলে ৫২ হাজার ৫৫২ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ করা হয়েছিল। সে হিসাবে এ বছর সরিষার আবাদ বেড়েছে ৩০ হাজার ৬০৯ হেক্টর জমিতে। কৃষিবিভাগ চলতি বছর রংপুর অঞ্চলে ৩শ কোটি টাকার সরিষা উৎপাদন আশা করছে ।জানা গেছে, এ বছর রবি মৌসুমে কুড়িগ্রাম জেলায় ২৬ হাজার ৫৮৫ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে, যা রংপুর অঞ্চলের সর্বোচ্চ। এ ছাড়া রংপুর জেলায় ২৫ হাজার ৪৫০ হেক্টর, গাইবান্ধা জেলায় ১৭ হাজার ৫৭৪ হেক্টর, লালমনিরহাট জেলায় ৪ হাজার ৮৮০ হেক্টর ও নীলফামারী জেলায় ৮ হাজার ৬৭২ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ করা হয়েছে।
এদিকে নদীর বুকে জেগে ওঠা বালুচরের কোলঘেঁষা মেঠোপথ আর চরাঞ্চলের কৃষিতে দোল খাচ্ছে সরিষা। দিগন্ত জোড়া হলুদ ফুলে ফুলে ছেয়ে গেছে মাঠ। সবুজের আগায় ভরা সরিষা ফুলে ঘুরপাক খাচ্ছে মৌমাছি। দেখে মনে হয় মাঘের হিম শীতল বাতাস আর সূর্যের লুকোচুরিতে হাসছে কৃষকের স্বপ্ন। সরিষার বাম্পার ফলনে খুশি তাদের মন।তিস্তা-ঘাঘট নদী বেষ্টিত গঙ্গাচড়া উপজেলার কিসামত হাবু গ্রামের আব্দুল মতিন বলেন, এ বছর ৬৬ শতক জমিতে সরিষার আবাদ করেছি। গত বছরের চেয়ে জমি বেড়েছে। আবাদও ভালো হয়েছে। গত বছর ২২ শতক জমিতে সরিষা চাষ করে যা লাভ হয়েছিল, এবার ফলন ভালো হওয়ায় তার কয়েকগুণ বাড়তে পারে।মাঘের শীতের ওপর ফসলের ফলন কিছুটা নির্ভর করছে জানিয়ে পীরগাছা উপজেলার ছাওলা ইউনিয়নের চর গাবুড়া গ্রামের কৃষক জয়নাল মিয়া বলেন, বেশি শীত এবং তাপমাত্রা কমলে সরিষার ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে এবার ফলন দেখে মনে শান্তি লাগছে। ক্ষেত জুড়ে হলুদ ফুলে ফুলে ভরে উঠেছে। আশা করছি সরিষা বিক্রি করে বন্যার ক্ষতি কিছুটা হলেও পুষিয়ে নিতে পারব।মতিন ও জয়নালের মতো এখন সব কৃষকের চোখে ভালো দামে সরিষা বিক্রির আশা। এক মাস পর সরিষা ঘরে তোলার সময় ন্যায্যমূল্য দাম পেলে আগামীতে সরিষার চাষাবাদ আরও বাড়বে বলে মনে করছেন কৃষকরা। তারা বলছেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ফলন ভালো হয়। ন্যায্যমূল্য পেলে আমাদের কৃষকের আগ্রহ তৈরি হয়। মিঠাপুকুর উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের বুজরুক হরিপুর এলাকার কৃষক দুলা মিয়া ২ বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছে । ফলন ভাল হয়েছে । তিনি আশা করছেন দামও ভাল পাবেন ।দেশে বছরে ভোজ্যতেলের চাহিদা রয়েছে প্রায় ২৪ লাখ টন। এর মধ্যে সরিষা, তিল ও সূর্যমুখী হতে স্থানীয়ভাবে উৎপাদন হয় মাত্র ৩ লাখ টন, যা চাহিদার শতকরা ১২ ভাগ। বাকি ভোজ্যতেল আমদানি করতে হয়। তেলের আমদানি নির্ভরতা কমাতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বিভিন্ন উদ্যোগের কারণে সরিষা চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে।কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, এ বছর সরিষা চাষে কৃষকদের প্রণোদনা দেওয়ার কারণে আবাদ কিছুটা বেড়েছে। অন্য ফসলের চেয়ে সরিষা উৎপাদনে খরচ অনেক কম। লাভ বেশি হওয়ায় সরিষা চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে। এ কারণে দিন দিন সরিষা চাষে ঝুঁকছেন কৃষকরা। খরচের চেয়ে লাভ বেশি হওয়ায় কৃষকরাও সরিষা চাষে ঝুঁকছেন। এ বছর সরিষার ফলনও হয়েছে বাম্পার। সরিষা বাংলাদেশের প্রধান ভোজ্য তেল ফসল। বিভিন্ন সরিষার বীজে প্রায় ৪০-৪৪ শতাংশ তেল থাকে। সরিষার তেলের রয়েছে অনেক ওষুধি গুণ। সরিষার খৈলেও প্রায় ৪০ শতাংশ আমিষ থাকে।সরিষার খৈল গরু ও মহিষের পুষ্টিকর খাবার। সরিষার গাছ আবার জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। এসব কারণে বিশেষজ্ঞগণ সরিষার চাষ বৃদ্ধি করার জন্য কৃষকদের পরামর্শ দিয়েছেন।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক রিয়াজ উদ্দিন বলেন, রবিশস্য হিসেবে সরিষা চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে বিনামূল্যে সরিষা বীজ দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে চাষকৃত সরিষার বেশির ভাগেই দানা ও ফুল এসেছে। শুধু রংপুর নয়, পুরো অঞ্চলের পাঁচ জেলায়. সরিষা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। তবে জানুয়ারির মধ্যভাগে শৈত্যপ্রবাহ ও ঘন কুয়াশা বেশি দিন স্থায়ী হলে সরিষার ফলনে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে।
রংপুর বিনার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডক্টর মোহাম্মদ আলী জানান রংপুর বিভাগের ৮ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ৬ শ টন সরিষা বীজ প্রনোদনা দেয়া হয়েছে । তিনি বলেন ৭শ কৃষককে পরোদনা দেয়া হয়েছে । তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে হাতে কলমে । ফলন ভাল হয়েছে । দামও ভাল পাবেন ।তিনি বলেন দেশে বছরে ভোজ্যতেলের চাহিদা রয়েছে প্রায় ২৪ লাখ টন। এর মধ্যে সরিষা, তিল ও সূর্যমুখী হতে স্থানীয়ভাবে উৎপাদন হয় মাত্র ৩ লাখ টন, যা চাহিদার শতকরা ১২ ভাগ।