যারা হজ অথবা ওমরাহ আদায় করার নিয়তে এহরাম বাঁধে তাদের ওপর এর সকল অনুষ্ঠানাদি সম্পন্ন করা ওয়াজিব হয়ে পড়ে। আল-কুরআনে ইরশাদ হয়েছে : ‘হজ হয় সুবিদিত মাসগুলোতে। তারপর যে কেউ এ মাসগুলোতে হজ করা স্থির করে সে হজের সময় স্ত্রী-সম্ভোগ, অন্যায় আচরণ ও কলহ বিবাদ করবে না। আর তোমরা উত্তম বাজ থেকে যাই করো, আল্লাহ তা জানেন। আর তোমরা পাথেয় সংগ্রহ করো। নিশ্চয়ই সবচেয়ে উত্তম পাথেয় হচ্ছে তাকওয়া (আল্লহভীতি)। হে বোধসম্পন্ন ব্যক্তিগণ! তোমরা আমারই তাকওয়া অবলম্বন করো’। [সূরা আল বাকারাহ : আয়াত ১৯৭]
হজ অথবা ওমরাহ এ দু’টির মধ্যে ওমরাহ-এর জন্য কোনো সময় নির্ধারিত নেই। বছরের যেকোনো সময় তা আদায় করা যায়। কিন্তু হজের মাস এবং এর অনুষ্ঠানাদি আদায়ের জন্য সুনির্দিষ্ট তারিখ নির্ধারিত রয়েছে। কাজেই এ আয়াতের শুরুতেই বলে দেয়া হয়েছে যে, হজের ব্যাপারটি ওমরাহর মতো নয়। এর জন্য কয়েকটি মাস রয়েছে, সেগুলো প্রসিদ্ধ ও সবিদিত। আর তা হচ্ছে শাওয়াল, যিলক্কদ ও ফিলহজ। হজের মাস শাওয়াল হতে আরম্ভ হওয়ার অর্থ হচ্ছে এর পূর্বে হজের এহরাম বাঁধা জায়েজ নয়।
হজের সময় তিনটি কাজ নিষিদ্ধ। যেমন : রাকাস, ফুসুক ও জিদাল। এই তিনটি বিষয়ের পরিপূর্ণ জ্ঞান থাকা সকলেরই দরকার।
(ক) রাফাস আরবি শব্দটির অর্থ ব্যাপক। যাতে স্ত্রী-সম্ভোগ ও তার আনুষঙ্গিক কর্ম, স্ত্রীর সাথে ঘনিষ্ঠভাবে মেলামেশা এমনকি খোলাখুলিভাবে এতদসংক্রান্ত আলাপ-আলোচনাও এর অন্তর্ভুক্ত। এহরাম অবস্থায় এসবই হারাম। হাদিসে এসেছে রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন : ‘ যে কেউ এমনভাবে হজ করবে যে, তাতে রাফাস, ফুসুক ও জিদাল তথা অশ্লীলতা, পাপ ও ঝগড়া ছিল না, সে তার হজ থেকে সেদিনের ন্যায় ফিরে আসল, যেদিন তাকে তার মাতা জন্ম দিয়েছিল”। [সহীহ বুখারী : ১৫২১; সহীহ মুসলিম : ১৩৫০] (খ) ফুসুক-এর শাব্দিক অর্থ বের হওয়া। আল কুরআনের ভাষায় নির্দেশ লংঘন করা বা নাফরমানি করাকে ফুসুক বলা হয়। সাধারণ অর্থে-যাবতীয় পাপকেই ফুসুক বলে। তাই অনেকে এ স্থলে সাধারণ অর্থই গ্রহণ করেছেন। কিন্তু হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা:) ফুসুক শব্দের অর্থ করেছেন : সে সকল কাজকর্ম যা এহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ। স্থান অনুসারে এ ব্যাখ্যাই যুক্তিযুক্ত। কারণ এহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ ও নাজায়েজ হচ্ছে ছয়টি কাজ। (১) স্ত্রী-সম্ভোগ ও এর আনষঙ্গিক যাবতীয় আচরণ। (২) স্থলভাগের জীবজন্তুকে শিকার করা বা শিকারিকে বলে দেয়া। (৩) নখ বা চুল কাটা, (৪) সুগন্ধি দ্রব্যের ব্যবহার। এ চারটি বিষয় নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলের জন্যই এহরাম অবস্থায় হারাম বা নিষিদ্ধ। অবশিষ্ট দু’টি বিষয় পুরুষের সাথে সম্পৃক্ত। (৫) সেলাই করা কাপড় পোশাকের মতো করে পরিধান করা। (৬) মাথা ও মুখমণ্ডল আবৃত করা । এহরাম অবস্থায় এ কাজ থেকে বিরত থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
(গ) আরবি জিদাল শব্দের অর্থ একে অপরকে পরাস্ত করার চেষ্টা করা। এ জন্যই বড় রকমের বিবাদকে জিদাল বলা হয়। জিদাল বা কলহবিবাদ সর্বক্ষেত্রেই পাপ ও নিষিদ্ধ। কিন্তু এহরামের অবস্থায় এর পাপ গুরুতর। এহরাম অবস্থায় ইবাদতে মগ্ন থাকাই হলো উত্তম পন্থা। ইবাদত বাদ দিয়ে ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত হওয়া অত্যন্ত অন্যায় ও চরমতম নাফরমানীয় কাজ। মোটকথা, হজের পবিত্র সময় ও স্থানগুলোতে শুধু নিষিদ্ধ কাজ থেকেই বিরত থাকা যথেষ্ট নয়, বরং সুর্বণ সুযোগ মনে করে আল্লাহর যিকির ও ইবাদত এবং সংকাজে সদা আত্মনিয়োগ করাই শ্রেয়।