ধামরাইয়ে কারখানার বায়ুদূষণ বিশ্বে বায়ুদূষণের দিক থেকে শীর্ষস্থানীয় দেশগুলোর একটি বাংলাদেশ। আর দেশের মধ্যে ঢাকা ও গাজীপুর রয়েছে দূষণের শীর্ষে। বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে, বায়ুদূষণের কারণে মানুষ ফুসফুস ও শ্বাসতন্ত্রের রোগে ক্রমেই বেশি আক্রান্ত হচ্ছে, বাড়ছে ক্যান্সার, হৃদরোগসহ অন্যান্য রোগ। বাংলাদেশে দূষণজনিত কারণে প্রতিবছর লক্ষাধিক মানুষের মৃত্যুও হচ্ছে।
বহু মানুষ অসুস্থ হয়ে ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে। দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে বায়ুদূষণের এমন দুর্বিষহ অবস্থা চললেও বায়ুদূষণ রোধের প্রচেষ্টা কম। বরং দিন দিন বায়ুদূষণের উৎসগুলো বাড়ছে। গতকাল কালের কণ্ঠে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, ঢাকার ধামরাইয়ের কালামপুর বিসিক শিল্পনগরীর একটি বোর্ড কারখানা থেকে নির্গত কালো ধোঁয়া ও ছাইয়ের কারণে আশপাশের কয়েকটি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষের জীবন রীতিমতো অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে।
গ্রামগুলোতে ফসল উৎপাদন কমে গেছে, গাছপালাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বহু মানুষ শ্বাসকষ্টে ভুগছে। পরিবেশ অধিদপ্তরে অভিযোগ দেওয়ার পরও কোনো প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না।
বাংলাদেশে বায়ুদূষণের প্রধানতম উৎসগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রচলিত পদ্ধতির ইটভাটা, মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহন, দূষণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা না থাকা কলকারখানা, অপরিকল্পিত নির্মাণকাজ, যত্রতত্র আবর্জনা পোড়ানো ইত্যাদি।
খবরের সঙ্গে প্রকাশিত ছবিতে দেখা যায়, ধামরাইয়ের এসবিকে নামের বোর্ড মিলে থাকা চিমনির উচ্চতা আশপাশের ভবনগুলো থেকেও কম। চিমনি থেকে গলগলিয়ে বেরিয়ে আসছে কালো ধোঁয়া এবং সেই ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ছে আশপাশের ভবনগুলোতে। পাশের একটি কারখানার ম্যানেজার জানান, ধোঁয়ার কারণে নিঃশ্বাস নিতেও কষ্ট হয়। জানা যায়, এসবিকে কারখানাটিতে পুরনো জুট পোড়ানো হয়। তা থেকে কালো ধোঁয়ার পাশাপাশি প্রচুর ছাইও ছড়িয়ে পড়ছে।
কালো ধোঁয়া ও ছাই লাগতে লাগতে আশপাশের ভবনগুলোও কালো হয়ে গেছে। এই ছাই গাছের পাতা বা ফসলের ওপর জমা হয়ে উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষণ বাধাগ্রস্ত করে। ফলে উদ্ভিদের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। জানা যায়, গোয়ালদী, কালামপুর, কাশিপুর, ডাউটিয়া, গাওয়াইলসহ আশপাশের বেশ কিছু গ্রামে ফসল উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
বায়ুদূষণ জনস্বাস্থ্যে মারাত্মক প্রভাব ফেলে। বায়ুদূষণের প্রধানতম শিকার হয় শিশু ও বয়স্ক মানুষ। ধামরাই এলাকার মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর ব্যাপক প্রভাব পড়া সত্ত্বেও পরিবেশ অধিদপ্তর নীরব কেন? আর সেটিই হচ্ছে প্রধান সমস্যা। বায়ুদূষণ রোধে আমাদের অনেক আইন রয়েছে। দূষণ নিয়ন্ত্রণে পরিবেশ অধিদপ্তরসহ অনেক সংস্থার সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব রয়েছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ভূমিকা বরাবরই প্রশ্নবিদ্ধ। তাঁদের দুর্নীতি, অবহেলা ও উদ্যোগহীনতার খেসারত দিতে হয় স্থানীয় জনগণকে তাদের জীবন দিয়ে। আমরা চাই, বায়ুদূষণকারী কারখানাটি অবিলম্বে বন্ধ করা হোক। দূষণের কারণে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা হোক। দূষণ নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বপ্রাপ্তদের জবাবদিহি নিশ্চিত করা হোক।