একটা সময় শুধু উৎসব নয়, সারা বছর জমজমাট থাকতো গানের বাজার। প্রথমে ক্যাসেট, তারপর সিডি আর এখন ডিজিটাল মাধ্যমে প্রকাশ হচ্ছে গান। তবে মাধ্যম বদলের সঙ্গে সঙ্গে গানের বাজার যেখানে বিস্তৃত হওয়ার কথা, সেখানে থমকে গেছে। বিশেষ করে বড় অডিও কোম্পানিগুলো মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে গান থেকে। একটা সময় গানে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করলেও এখন তার উল্টো। বরঞ্চ গানের বদলে এসব কোম্পানি ব্যস্ত সময় পার করছে নাটকে। বড় প্রায় সব কোম্পানিরই এখন নাটকের আলাদা ইউটিউব চ্যানেল রয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি কোম্পানি উৎসবে গান প্রকাশ করছে, আর বছরব্যাপী নাটকেই মনোযোগী তারা। খেঁাঁজ নিয়ে জানা গেছে, নাটক থেকে আয় গানের চাইতে অনেক বেশি। অনেকে আবার জানিয়েছেন, গানের বিনিয়োগ উঠতেই বেগ পেতে হয়।
লাভ তো দূরের কথা। আর নাটকে স্পন্সর থাকে, পাশাপাশি ভিউয়ের ওপরও একটা ভালো আয় আসে। তাছাড়া একটি নাটকের ক্লিপ ফেসবুক-ইউটিউবে ছেড়েও সেখান থেকে ভালো অর্থ আয় হচ্ছে।
আরও জানা গেছে, আগে সিডি বিক্রি থেকে, মোবাইলের রিংটোন কিংবা ওয়েলকাম টিউনসহ নানা মাধ্যমে গান থেকে আয় আসতো। কিন্তু এখন ডিজিটালি অনেক মাধ্যমে গান প্রকাশ হলেও সেখান থেকে আয় একেবারে কমে গেছে। তাছাড়া শিল্পীদের অসহযোগিতার একটি ব্যাপারও উল্লেখ করেছেন অনেক কোম্পানি। গীতিকার, সুরকার, শিল্পী, সংগীত পরিচালক ও কোম্পানিগুলোর একাত্মতার অভাবই মূলত এমন অবস্থার সৃষ্টি করেছে। এক্ষেত্রে গানের সংগঠনগুলোও খুব একটা জোরালো ভূমিকা রাখতে পারছে না। গানের ইন্ডাস্ট্রির এই অবস্থায় আসার কারণ ও সেখান থেকে উত্তরণের বিষয়ে মানবজমিনকে ঐতিহ্যবাহী প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান সাউন্ডটেকের কর্ণধার সুলতান মাহমুদ বাবুল বলেন, এই অবস্থায় আসার কারণ হলো সবাই এক না। আমি অন্তত চাই সবাই আবার একসঙ্গে কাজ করুক। কিন্তু এক্ষেত্রে গীতিকার, সুরকার ও শিল্পীদের সহযোগিতা প্রয়োজন।
এমনিতেই গান থেকে আয় কমে গেছে। এখন আলোচনা করে সবার এক হয়ে কাজ করার সময়। দ্বন্দ্ব ভুলে আলোচনার টেবিলে বসতে হবে। আমি আমার দিক থেকে তৈরি বসার জন্য। একাত্মতা ছাড়া গানের ইন্ডাস্ট্রির উন্নয়ন সম্ভব নয়। এদিকে বিষয়টি নিয়ে জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী আসিফ আকবর বলেন, সংগীতের দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে কেউ কারও পাশে নেই। দ্বন্দ্ব লেগেই আছে। একসঙ্গে বসে আলোচনায়ও কেউ রাজি নয়। এই যখন অবস্থা তখন ইন্ডাস্ট্রির উন্নতি কীভাবে সম্ভব। অথচ অন্যান্য দেশে কিন্তু কোম্পানি, শিল্পী, গীতিকার, সুরকার সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। হয় এক হয়ে কাজ করতে হবে, না হয় এমনই বেহাল অবস্থা থেকে যাবে।