• বৃহস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:২৬ অপরাহ্ন

 “৪০০” কোটি টাকার মালিক প্রধানমন্ত্রীর বাসার সেই পিয়ন 

অনলাইন ডেস্ক / ১৪ Time View
Update : সোমবার, ১৫ জুলাই, ২০২৪

দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজের বাসার সাবেক এক কর্মীর অর্থসম্পদের বিষয়টি সামনে আনেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমার বাসায় কাজ করেছে, পিয়ন ছিল সে, এখন ৪০০ কোটি টাকার মালিক। হেলিকপ্টার ছাড়া চলে না।” এরপর থেকেই দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। কে এই ৪০০ কোটি টাকার মালিক পিয়ন? খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওই ব্যক্তির নাম জাহাঙ্গীর আলম ওরফে “পানি জাহাঙ্গীর”। বাড়ি নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার খিলপাড়া ইউনিয়নে। জানা গেছে, শেখ হাসিনা বিরোধী দলে থাকার সময় “সুধা সদনে” তার ব্যক্তিগত স্টাফ হিসেবে কাজ করতেন এই জাহাঙ্গীর আলম। সে সময় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনার জন্য বাসা থেকে খাবার পানি নেওয়া হতো, সেই পানি বহন করতেন জাহাঙ্গীর। এজন্যই তিনি “পানি জাহাঙ্গীর” হিসেবে পরিচিতি পান। পরবর্তী সময়ে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হলে তিনি তার ব্যক্তিগত কর্মচারী হিসেবে কাজ করেন।

খোঁজ নিয়ে আরও জানা গেছে, জাহাঙ্গীর প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মচারী হিসেবে কাজ করলেও ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে পরিচয় দিতেন। এ পরিচয় দিয়ে তিনি নানা তদবির করে কোটি কোটি টাকা কামিয়েছেন। নোয়াখালী ও ঢাকায় বিপুল সম্পদ গড়ে তুলেছেন। সঙ্গে নিয়ে ঘুরতেন লাইসেন্স করা পিস্তল।

শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত সহকারী পরিচয় দিয়ে জাহাঙ্গীর আলম বিভিন্ন অনৈতিক কাজ করছেন এমন অভিযোগে গত বছরের ৬ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, “জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কোনো সম্পর্ক নেই।” এ বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রয়োজনে নিকটস্থ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সহায়তা নিতেও বলা হয়।প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, কোটি কোটি টাকার সম্পদ কামানোর পর রাজনৈতিক মাঠে নামেন পিয়ন জাহাঙ্গীর। বাগিয়ে নেন চাটখিল উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতির পদও। একই সঙ্গে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক পাওয়ার জন্য নমিনেশন তুলেছিলেন। পরে নৌকা প্রতীক না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দেন। তবে পরবর্তীতে তিনি নির্বাচন থেকে সড়ে দাঁড়ান।

ঢাকায় একাধিক প্লট-ফ্ল্যাট রয়েছে জাহাঙ্গীরের। ধানমণ্ডিতে স্ত্রীর নামে আড়াই হাজার বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট কিনেছেন। এছাড়া নোয়াখালীর মাইজদি শহরের হরি নারায়ণপুরে তার আট তলা একটি বাড়ি রয়েছে। সেটিও তার স্ত্রীর নামে। মোহাম্মদপুর ও নিউমার্কেটে দুটি দোকান রয়েছে। মিরপুরে একটি সাত তলা ভবন ও দুটি ফ্ল্যাট রয়েছে।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামার তথ্য অনুযায়ী, জাহাঙ্গীর কৃষিখাত থেকে তার প্রতি বছর আয় ৪ লাখ টাকা, বাড়ি ও দোকান ভাড়া থেকে সাড়ে ১১ লাখ টাকা আয়, শেয়ার, সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংক আমানত থেকে ৯ লাখ টাকা আয়, চাকরি থেকে ৬ লাখ ও অন্যান্য উৎস থেকে প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা আয়ের তথ্য জানান। হলফনামার হিসাব অনুযায়ী বছরে প্রায় ৫০ লাখ টাকার আয়ের কথা জানিয়েছেন।
স্থানীয় সূত্র সংবাদমাধ্যমটিকে জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পিয়ন হিসেবে কাজ করার সময় ব্যক্তিগত পরিচয় দিয়ে তদবির, টেন্ডারবাজি, নিয়োগ বাণিজ্যসহ নানা অপকর্ম করে বেড়িয়েছেন জাহাঙ্গীর। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচয় ব্যবহার করে গাজীপুরের ইপিজেড এলাকার ঝুট ব্যবসাও নিয়ন্ত্রণ করতেন তিনি।

বিপুল সম্পদের বিষয়ে জানতে একাধিকবার জাহাঙ্গীর আলমের ব্যক্তিগত মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। একাধিক সূত্র জানিয়েছে, বিকেল পর্যন্ত তার মোবাইল খোলা ছিল। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর তিনি মোবাইল বন্ধ করে গা ঢাকা দেন।

 


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category

ফেসবুকে আমরা