হঠাৎ চলে গেলেন আনিছুর রহমান লাকু: রংপুর রাজনীতিতে শূন্যতার কালো ছায়া,শেষ যাত্রায় হাজারো মানুষের কান্না ।
বুধবার সকালে হঠাৎ করেই থেমে গেল একজন সংগ্রামী নেতার প্রাণ। বিএনপি নেতা ও রংপুর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আনিছুর রহমান লাকু আর নেই—এই সংবাদ ছড়িয়ে পড়তেই গোটা রংপুরজুড়ে নেমে আসে শোকের ছায়া।
মাত্র ৫৩ বছর বয়সে, সকাল ৭টা ১০ মিনিটে, বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। রেখে গেলেন দুই কন্যা আর অসংখ্য স্বজন, সহকর্মী ও রাজনৈতিক শুভানুধ্যায়ী।
আগামী ১৪ অক্টোবর রংপুর জেলা বিএনপির সম্মেলন উপলক্ষে টানা সাংগঠনিক ব্যস্ততা সামলাচ্ছিলেন আনিছুর রহমান লাকু। প্রস্তুতিমূলক সভা শেষ করে মঙ্গলবার রাতে ঢাকা থেকে ফেরার পথে গাড়িতেই হঠাৎ বুকে ব্যথা অনুভব করেন তিনি। সঙ্গী নেতাকর্মীরা দ্রুত হাসপাতালে নিলেও চিকিৎসকদের কাছে পৌঁছানোর আগেই নিভে যায় তার জীবনের প্রদীপ।
ছাত্রজীবন থেকেই সক্রিয় রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন লাকু। ছাত্রদল দিয়ে শুরু করে জেলা ছাত্রদলের সভাপতি, জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক, কেন্দ্রীয় যুবদলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক, মহানগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদকসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। ২০২২ সালে তাকে রংপুর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব পদে মনোনীত করা হয়। আসন্ন সম্মেলনে তিনি সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী ছিলেন এবং জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রংপুর-৩ আসনে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন।
সকালে মরদেহ পৌঁছায় রংপুর শহরের নুরপুরে তার নিজ বাড়িতে। চারপাশে তখন শুধু আহাজারি। আত্মীয়-স্বজন, রাজনৈতিক সহকর্মী, প্রতিবেশী—সবার চোখে জল। বাতাস ভারী হয়ে ওঠে প্রিয় নেতাকে শেষবারের মতো দেখার আকুলতায়।
বাদ আসর রংপুর ঈদগাহ কালেক্টর মাঠে প্রথম জানাজায় অংশ নেন বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের হাজারো নেতা-কর্মী। বিশাল মাঠ পরিণত হয় শোকার্ত মানুষের মিলনমেলায়। রাতে নুরপুর ছোট মাঠে দ্বিতীয় জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হয় নুরপুর কবরস্থানে। পুরো এলাকা তখন নিস্তব্ধ, যেন রংপুর তার প্রিয় সন্তানকে হারানোর বেদনায় বাকরুদ্ধ।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ কেন্দ্রীয় নেতারা এক বিবৃতিতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। তারা বলেন, “আনিছুর রহমান লাকু ছিলেন দলের একজন নিবেদিতপ্রাণ সংগঠক। তার মতো আদর্শবান নেতা হারানো বিএনপির জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি।”
আনিছুর রহমান লাকুর মৃত্যু শুধু একটি পরিবারের নয়, রংপুরের রাজনৈতিক ইতিহাসেও এক গভীর শূন্যতা তৈরি করেছে। তার সহকর্মীরা বলছেন, তিনি ছিলেন একাধারে সাহসী নেতা, সহজ-সরল মানুষ এবং তৃণমূলের প্রিয় মুখ। রংপুরের রাজনীতির মাঠে তার অভাব দীর্ঘদিন অনুভূত হবে।







