• সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ০৭:৪৮ অপরাহ্ন

ত্রয়োদশ জাতীয় তারেক রহমানের ঐক্যের ডাকে তৃণমূলে প্রাণচাঞ্চল্য

অনলাইন ডেস্ক / ৫৬ Time View
Update : বুধবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৫

সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপিতে ঐক্যের হাওয়া বইতে শুরু করেছে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে বৈঠকের পর মাঠে ফিরছেন মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতারা। দীর্ঘদিনের দূরত্ব ও অসন্তোষ পেরিয়ে সবাই ঐক্যবদ্ধ হওয়ায় প্রাণচাঞ্চল্য ফিরেছে দলে। নেতৃত্বের প্রতি আস্থা ও সমন্বয়ের বার্তা ছড়িয়ে পড়ছে একেবারে তৃণমূল পর্যন্ত। গত রবিবার ও সোমবার দশ সাংগঠনিক বিভাগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে মতবিনিময়ের মধ্য দিয়ে এই অবস্থা তৈরি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। প্রথম দিনে রংপুর, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ ও ফরিদুপরের সম্ভাব্য প্রার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন তারেক রহমান। দ্বিতীয় দিনে সিলেট, খুলনা, রাজশাহী, বরিশাল ও ঢাকা বিভাগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন তিনি। পৃথকভাবে এ বৈঠকে এক হাজারেরও বেশি মনোনয়নপ্রত্যাশী অংশ নেন। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্যে সম্ভাব্য প্রার্থীদের মাঝে এক ধরনের আশার সঞ্চার হয়েছে।

এদিকে গতকাল মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে করা সুপারিশ হস্তান্তর করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এতে রাজনৈতিক দলগুলো যেসব বিষয়ে নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে, তা উল্লেখ করা হয়নি। বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ঐকমত্য কমিশন অনৈক্য প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা গ্রহণ করেছে। একক প্রার্থী ঘোষণা ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের উপায়ের সুপারিশসহ দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার রাতে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে ভার্চুয়ালি বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে অংশ নেওয়া অনেকেই বলেছেন, সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে ডাক পেয়ে এই বৈঠকে অংশ নেওয়ায় তারা সম্মানিত বোধ করছেন। সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ায় এলাকায় মানুষের মাঝে তাঁদের নিয়ে আগ্রহ বাড়ছে। এতে করে এলাকায় দলের মধ্যে নির্বাচনকে সামনে রেখে সম্ভাব্য প্রার্থী ও তাদের অনুসারীদের মাঝে যে দূরত্ব তৈরি হয়েছিল, তা অনেকটা ঘুচে যাবে। বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এ বিষয়ে বলেন, সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বৈঠক করেছেন। বৈঠক থেকে তিনি ঐক্যের ডাক দিয়েছেন। তাঁর ডাকে দল আজ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। অনেকেই নির্বাচনে মাঠে নেমে পড়েছেন। আশা করি, এই বৈঠকের ফল ভোটের মাঠে পাওয়া যাবে।

নানা নাটকীয়তার পর খুলনা-২ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী নজরুল ইসলাম মঞ্জু চার বছর পর হাইকমান্ডের ডাক পান। তিনি একাধিকবার সংসদ সদস্য ছিলেন। খুলনা মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি পদে ছিলেন এবং কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক এবং সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তাঁকে নিয়ে নানা আলোচনা ছিল। এই অবস্থায় নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, ‘ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সবাইকে ডেকেছেন। দলের থেকে নানা কারণে ক্ষুব্ধ, বেশ কিছুদিন দূরে থাকা এবং দলের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি হওয়ায় উনি সবাইকে কাছে টানার চেষ্টা করেছেন। নির্বাচনী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার ক্ষেত্রে এ ধরনের পদক্ষেপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল এবং সেই কাজটা তারেক রহমান করেছেন। শুধু তাই নয়, নানা সমালোচনার মুখে গত ২৬ আগস্ট বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ফজলুর রহমানের পদ তিন মাসের জন্য স্থগিত করা হয়। স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের আগেই কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী ফজলুর রহমান মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহণের ডাক পান। এ ছাড়াও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মজিবর রহমান সরওয়ারকে ফের বরিশাল মহানগরে সক্রিয় করা হয়েছে। তিনিও মতবিনিময় সভায় ছিলেন।

বরিশাল-৫ আসনের তাঁকে মনোনয়ন দেওয়া হবে- এমন ইঙ্গিত দিয়ে দলের একজন নীতিনির্ধারক জানান, জনপ্রিয়তা ও ত্যাগÑ এ দুই বিষয় মাথায় রেখেই মনোনয়ন দিতে চান। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যে কোনো মূল্যে দলে ঐক্য চান। দুই দিনের বৈঠকেও সেই বার্তা তিনি দিয়েছেন। যাঁদের ত্যাগ আছে, তাঁদের সবাইকেই তিনি ডেকেছেন এবং ঐক্যের বার্তা দিয়েছেন।

গত দুই দিনের বৈঠক সূত্রে জানা যায়, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যখন তাঁর মা সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ত্যাগের কথা বলেন, তখন তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। অশ্রুশিক্ত হন মনোনয়নপ্রত্যাশীও। এ সময় নির্বাচন সামনে রেখে সবাই ঐক্যবদ্ধ থেকে তাঁর নির্দেশে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবেন বলে শীর্ষ নেতাকে তাঁরা হাত তুলে আশ্বস্ত করেছেন। নেতারা জানান, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তাঁর বক্তব্যের বড় অংশজুড়ে ছিল ঐক্যবদ্ধ থাকার বার্তা। কারণ, নির্বাচন নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এই ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে ঐক্যবদ্ধ হওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই। এই অবস্থায় ধানের পক্ষে গণজোয়ার তুলতে শিগগিরই প্রায় ২০০ আসনে একক প্রার্থী ঘোষণা দেবে বিএনপি। নাটোর-১ আসনের তাইফুল ইসলাম টিপু, পটুয়াখালী-২ আসনের মুনির হোসেন এবং রাজশাহী-৬ আসনের সম্ভাব্যপ্রার্থী আনোয়ার হোসেন উজ্জ্বল প্রায় একই সুরে বলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান যাঁকে মনোনয়ন দেবেন, তাঁর পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবেন তাঁরা।

সূত্র জানায়, মতবিনিময় সভার শেষ দিনে খালেদা জিয়ার ত্যাগের কথা উল্লেখ করে তারেক রহমান মনোনয়প্রত্যাশীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আমার মাও মৃত্যুর মুখোমুখি ছিল। ইচ্ছে করলে মাকে আমি নিয়ে আসতে পারতাম। কিন্তু মা তো আসেনি আপনাদের ছেড়ে। ছয়বার তিনি মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছেন। মৃত্যুর মুখোমুখি সত্ত্বেও মা আপনাদের ছেড়ে যাননি। সেই মাকে সামনে রেখে আপনারা এক থাকবেন। যিনি আপনাদের জন্য এত ত্যাগ স্বীকার করেছেন। যে মা তাঁর ৪০ বছরের বাড়ি হারিয়েছেন। শেখ হাসিনা মাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছেন। যে মা তাঁর সন্তানকে হারিয়েছেন। মা বুঝে সন্তান হারানোর ব্যথা। সেই মায়ের সবকিছুর মূলেই ছিল এ দেশের জনগণ। সবকিছুর মূলেই ছিল একটি গণতন্ত্রিক রাষ্ট্র। ইচ্ছে করলেই আপস করতে পারতেন। কিন্তু কোনো আপসে যাননি। তাঁর লক্ষ্যই ছিল ঐক্যবদ্ধের মধ্য দিয়ে একটি জাতি গঠন করা। সেখানে কত ত্যাগ না স্বীকার করেছেন মা। একই সঙ্গে গণতন্ত্রের জন্য কত লোক শাহাদাত বরণ করেছেন। কত লোক জেল খেটেছেন, কত লোকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে মা যদি আপস করতেন, তাহলে এত কষ্ট মায়ের করতে হতো না।’

এ সময় উপস্থিত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়সহ মনোনয়ন প্রত্যাশীরাও আপ্লুত হয়ে পড়েন। ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নিপুণ রায় চৌধুরী বলেন, দলে এত পরিমাণ যোগ্যপ্রার্থী রয়েছেন, যাঁদের কারোই কোনো অংশে ত্যাগ কম না। তারপরও এক আসনে একজনকেই মনোনয়ন দিতে হবে। আমার মনে হয় প্রকৃত নেতাকর্মীদের একের পর এক ত্যাগ স্বীকারের কথা ভেবেই তিনি আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েছেন। আমরা যাঁরা মাঠের কর্মী রয়েছি, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের ডাকে ঐক্যবদ্ধ থাকার প্রতিজ্ঞা করেছি।’

প্রত্যক্ষদর্শীদের সূত্রে জানা যায়, গত দুই দিন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠক করে অনেক প্রার্থী ও তাঁদের সমর্থকরা ঐক্যবদ্ধ থাকার সেøাগান দেন, কলাকুলি এবং একসঙ্গে ছবি তুলে সামাজিক মাধ্যমে ছেড়ে দেন।

মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতারা বলেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বক্তব্যে ঐক্যের বার্তার পাশাপাশি যাঁরা এলাকায় জনপ্রিয়, বিগত আন্দোলন-সংগ্রামে ছিলেন, নেতাকর্মীদের বিপদে-আপদে পাশে ছিলেন, তাঁদের মনোনয়ন দেওয়ার ইঙ্গিত মিলেছে। এটাই তৃনমূলের প্রত্যাশা। প্রকৃত যাঁরা মাঠে ছিলেন, জিয়া পরিবারের দুর্দিনে যাঁরা ছিলেন, তাঁদের মধ্যে থেকেই যেন প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া হয়Ñ এমন প্রত্যাশাও তাদের। রাজধানী ঢাকার একাধিক সম্ভাব্য প্রার্থী বলেন, বিগত দিনে যতবার ঢাকার স্থানীয় বাসিন্দাদের বিএনপি মনোনয়ন দিয়েছেন, ততবারই বিএনপি ভালো ফল করেছে। এবারও সেই নজির স্থাপন করতে দলের শীর্ষ নেতার প্রতি বিশেষ অনুরোধ রাখেন।

সম্ভাব্য এক প্রার্থী বলেন, তাঁদের কাছে তথ্য রয়েছেÑ রাজধানীর বেশ কয়েকটি আসন যুগপৎ আন্দোলনের মিত্রদের ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। আবার দলীয় মনোনয়নও ঢাকার স্থানীয় বাসিন্দাদের পরিবর্তে অন্য জেলার মানুষদের দেওয়া হচ্ছে। এই বিষয়টি আরও ভালোভাবে বিবেচনায় নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন ওই প্রার্থী।

 


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category

ফেসবুকে আমরা