আজকাল অনেক পরিবারেই বাচ্চাদের ঘুমানোর ঘরে হালকা নাইট লাইট বা টিভির আলো জ্বলে থাকে। অনেকেই মনে করেন, এতে শিশুর ভয় কমে যায় বা ঘুম আরও নিশ্চিন্ত হয়। কিন্তু গবেষণা বলছে—অতিরিক্ত আলো আসলে বাচ্চাদের ঘুমের মান নষ্ট করে দিচ্ছে নিঃশব্দে।
অন্ধকারে ঘুমের বৈজ্ঞানিক গুরুত্ব
শরীরের একটি প্রাকৃতিক হরমোন আছে, মেলাটোনিন। এটি রাতের অন্ধকারে নিঃসৃত হয় এবং শরীরকে ঘুমের সংকেত পাঠায়। আলো থাকলে এই হরমোনের নিঃসরণ কমে যায়। ফলে বাচ্চা ঘুমালেও তার ঘুম গভীর হয় না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন—
হালকা আলোতেও মেলাটোনিনের মাত্রা ৫০% পর্যন্ত কমে যেতে পারে।
ফলে শিশু ঘুম ভেঙে যায়, সকালে ক্লান্ত থাকে এবং মনোযোগের ঘাটতি দেখা দেয়।
অন্ধকার ঘর বাচ্চার মানসিক প্রশান্তি আনে
অন্ধকার ঘর শুধু ঘুমের মানই বাড়ায় না, শিশুর মানসিক স্থিতি ও স্নায়বিক বিকাশেও ভূমিকা রাখে। আলো কম থাকলে মস্তিষ্ক বিশ্রাম পায় এবং শিশুর আবেগীয় ভারসাম্য গঠনে সাহায্য করে।
কিভাবে বাচ্চার ঘর ঘুমের উপযোগী করবেন
ঘরের আলো বন্ধ রাখুন: ঘুমানোর অন্তত ৩০ মিনিট আগে ঘরের আলো নিভিয়ে দিন বা মৃদু হলুদ আলো ব্যবহার করুন।
নাইট লাইটের পরিবর্তে নিরাপত্তা আলো: যদি বাচ্চা একদম অন্ধকারে ভয় পায়, তবে দরজার নিচে বা কর্নারে খুব কম আলো রাখুন যা চোখে সরাসরি না পড়ে।
ভারী পর্দা ব্যবহার করুন: বাইরের আলো যাতে ঢুকতে না পারে সে জন্য ঘন ভারী বা ব্ল্যাকআউট পর্দা ব্যবহার করুন।
ইলেকট্রনিক ডিভাইস বন্ধ রাখুন: টিভি, ট্যাব বা ফোনের আলো শিশুর ঘুমের শত্রু। ঘুমানোর অন্তত এক ঘণ্টা আগে এসব ডিভাইস দূরে রাখুন।
নিয়মিত ঘুমের রুটিন: প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমানো এবং জাগা শিশুর দেহঘড়িকে স্থির রাখে।
ছোট পরিবর্তন, বড় উপকার অন্ধকার ঘরে ঘুমের অভ্যাস গড়ে তুললে শুধু ঘুমই নয়, শিশুর শিক্ষণ ক্ষমতা, মেজাজ ও শারীরিক বিকাশেও ইতিবাচক প্রভাব পড়ে।
বাচ্চাদের ঘুমের পরিবেশ তৈরি করা মানে শুধু একটি বিছানা আর চাদর নয়, বরং তাদের ছোট্ট শরীর ও মনের বিশ্রামের জন্য সঠিক পরিবেশ নিশ্চিত করা। আর সেই পরিবেশের প্রথম শর্ত—অন্ধকারে ঘুম।