ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে জুলাই–আগস্ট ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার ৪৫৩ পৃষ্ঠার রায় পড়া শুরু হয়েছে।
আজ সোমবার (১৭ নভেম্বর) দুপুর ১২টা ৩৫ মিনিটে বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ রায় ঘোষণার কার্যক্রম শুরু করেন। রায় ঘোষণা সরাসরি সম্প্রচার করছে বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ বিভিন্ন গণমাধ্যম।
২০২৪ সালের ছাত্র–জনতার গণবিক্ষোভে প্রায় ১,৪০০ জন নিহত এবং ২৫ হাজারের বেশি মানুষ আহত হওয়ার অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে এই মামলা হয়। গত ১৩ নভেম্বর ট্রাইব্যুনাল রায় ঘোষণার তারিখ ধার্য করে।
মামলায় মোট ৫৪ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে। দেশি–বিদেশি গণমাধ্যমে প্রকাশিত অডিও, ভিডিওসহ গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণও আদালতে উপস্থাপন করে প্রসিকিউশন। আসামিদের মধ্যে সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন রাজসাক্ষী হয়ে নিজের দায় স্বীকার করেন।
১৪ জুলাই গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনার উসকানিমূলক বক্তব্যের পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও রাজনৈতিক কর্মীরা নিরস্ত্র ছাত্র–জনতার ওপর হামলা চালায় বলে অভিযোগ।
হেলিকপ্টার, ড্রোন ও মারণাস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছেন শেখ হাসিনা—এমন অডিও রেকর্ড আদালতে উপস্থাপন করা হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপির মাধ্যমে এই নির্দেশ মাঠপর্যায়ে কার্যকর হয় বলে অভিযোগ।
১৬ জুলাই আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যার পর চারবার ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পরিবর্তন এবং তার সহপাঠীদের ওপর পাল্টা মামলা দায়ের করা হয়—এ অভিযোগও আমলে নেয় ট্রাইব্যুনাল।
৫ আগস্ট ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচিতে অংশ নিতে আসার পথে ছয় ছাত্রকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
একই দিনে ছয় আন্দোলনকারীকে গুলি করে হত্যা এবং তাদের লাশ পোড়ানোর অভিযোগ রয়েছে। নির্দেশদাতা হিসেবে অভিযুক্ত শেখ হাসিনা, কামাল ও মামুনকে দায়ী করা হয়েছে।
মোট ২৮ কার্যদিবসে সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা সম্পন্ন হয়।
জুলাই আন্দোলনের আহত, সন্তানহারা অভিভাবক, চিকিৎসক, সাংবাদিক, প্রত্যক্ষদর্শীসহ নানা পর্যায়ের ব্যক্তি সাক্ষ্য দিয়েছেন।
সমাপনী বক্তব্যে প্রসিকিউশন শেখ হাসিনাকে এ অপরাধের ‘নিউক্লিয়াস’ বা প্রধান নির্দেশদাতা হিসেবে উল্লেখ করে সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করে।
রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন আসামিদের নির্দোষ দাবি করে খালাস চান।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, “ন্যায়বিচার নিশ্চিত না হলে ইতিহাসে আমরা ভীরু জাতি হিসেবে চিহ্নিত হব।”
ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বলেন, “ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে। উভয় পক্ষই ন্যায়বিচার পাবে।”
ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ২০২৪ সালের ১৪ অক্টোবর ট্রাইব্যুনাল–১ পুনর্গঠন করা হয়। সারা দেশে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ নিয়ে ট্রাইব্যুনালে ৫৬টি অভিযোগ জমা পড়ে, যার ৫৪টির প্রধান আসামি শেখ হাসিনা।
অভিযুক্ত ব্যক্তিদের পালানো ঠেকাতে ট্রাইব্যুনাল শুরুতেই ৪৬ জনের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।