বাংলাদেশ ভারতকে ২-০ বা ২-১ গোলে হারাবে
এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাইপর্ব থেকে বাংলাদেশ ও ভারত উভয় দলের বিদায় নিশ্চিত হয়েছে আগেই। কিন্তু তাতে কী? প্রতিবেশী দুই দেশের ফুটবল প্রতিদ্বন্দ্বিতা যখন সামনে আসে, তখন তা কেবলই এক ‘মর্যাদার লড়াই’ হয়ে ওঠে।
আজ রাত আটটায় শুরু হতে যাওয়া সেই ম্যাচকে ঘিরে সারা দেশের ফুটবলপ্রেমীদের মধ্যে কাজ করছে বাড়তি উত্তেজনা।
আর এই ঐতিহাসিক লড়াইয়ের কথা উঠলেই অবধারিতভাবে চলে আসে কিংবদন্তি স্ট্রাইকার শেখ মোহাম্মদ আসলামের নাম। ম্যাচের আগে সেই ইতিহাসের অন্যতম নায়ক যেন ফিরে গেলেন প্রায় চার দশক পেছনে, ১৯৮৫ সালের ঢাকার সেই উত্তাল সাফ গেমসে।
কঠিন ম্যাচের উত্তাপের মাঝেও শান্ত হাসিতে আসলাম স্মৃতিচারণ করছিলেন সেই বিখ্যাত গোলের। তিনি বলেন, ‘সেটা একটা উত্তেজনাপূর্ণ খেলা ছিল। ভারতকে হারাতে হবে এই চিন্তায় আমি সারাক্ষণ বুঁদ হয়ে ছিলাম। আমার আব্বা আমাকে বলতেন, তুমি হাফ দ্যা ফিল্ড ক্রস করার সঙ্গে সঙ্গে গোলরক্ষকের দিকে তাকাবে।’
বাবার সেই শিক্ষা কাজে লেগেছিল মোক্ষম সময়ে। আসলাম বলেন, ‘আমি বাবার কথা মতো হাফ দ্যা ফিল্ড ক্রস করেই ভারতের গোলকিপার অতনুর (ভট্টাচার্য) দিকে তাকিয়ে দেখি ও একটু এগিয়ে এসেছে। আমি ওখান থেকে ঘুরেই শট করেছি, ওখান থেকেই গোল।’ ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের অন্যতম সেরা গোল হিসেবে বিবেচিত সেই গোলটি সেদিন বদলে দিয়েছিল দেশের ফুটবলের আত্মবিশ্বাস। আসলামের ভাষায়, ‘ভারতকে যে হারানো যায়, সেটা সেদিন আমরা প্রমাণ করেছি।’
তবে ২০২৫ সালের এই ম্যাচটিকে আসলাম দেখছেন ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে। তিনি মনে করেন, বিদায় নিশ্চিত হলেও এই ম্যাচের গুরুত্ব একটুও কমেনি। তিনি বলেন, ‘আজ আমাদের নিজেদের মাঠে খেলা। এই অ্যাডভান্টেজটা প্রতিটা মুহূর্তে আমাদের ছেলেরা যেন আদায় করে নিতে পারে সেটাই আমার চাওয়া। প্রতিটা গোলের সুযোগ যেন তারা কাজে লাগাতে পারে।’
আজকের ম্যাচে সবার নজর থাকবে দেশের ফুটবলের নতুন জাগরণের কাণ্ডারি হামজা চৌধুরী, শমিত সোম, জায়ান আহমেদ, কিউবা মিচেলদের ওপর। আসলামের দৃষ্টিও বিশেষভাবে হামজার দিকে। তিনি বলেন, ‘হামজা খুবই ভালো খেলোয়াড়। সবার নজর আজও হামজার দিকে থাকবে। আমারও আশা, তিনি ম্যাচ ঘুরিয়ে দিতে পারেন। তিনি একজন ক্লাসিক্যাল খেলোয়াড়।’
অভিজ্ঞ এই কিংবদন্তি বিশ্বাস করেন, আজ ভারতকে হারাতে পারবে বাংলাদেশ। দলের প্রবাসী এবং স্থানীয় খেলোয়াড়দের মধ্যে বোঝাপড়াটা ঠিকঠাক হলেই কাঙ্ক্ষিত জয় সম্ভব। আসলাম বলেন, ‘রাকিব খুবই ভালো ফুটবলার। ফরোয়ার্ড পজিশনে খেলেন এবং এই মাঠে দাপিয়ে বেড়ানোর অভিজ্ঞতা তার আছে। তারও আজ ভালো সুযোগ থাকবে।’
নিজের ভবিষ্যদ্বাণী জানাতেও দ্বিধা করেননি তিনি। ‘আজ বাংলাদেশ জিতবে। ২-০ কিংবা ২-১ গোলে জিতবে এটাই আমার প্রত্যাশা।’
আজ রাতে ঢাকা জাতীয় স্টেডিয়ামের আলো যখন জ্বলে উঠবে, তখন হয়তো ’৮৫-এর মতো ঢাক-ঢোল না থাকলেও, আসলামের মতো কিংবদন্তিদের স্মৃতি আর দর্শকদের আবেগ মিলেমিশে আবারও জানান দেবে—এই লড়াই কেবল ফুটবলের নয়, এ এক মর্যাদার লড়াই।