ঢাজা ১০:২৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ৮ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শুকিয়ে যাচ্ছে তিস্তা নদী, বোরো সেচে সংকটের আশঙ্কা কৃষকের


দেশের উত্তরাঞ্চলের ‘জীবনরেখা’ তিস্তা নদী ডিসেম্বরের শুরুতেই শুকিয়ে যেতে শুরু করেছে। এক সময়ের প্রশস্ত ও ঢেউ খেলানো নদী এখন সরু স্রোতে পরিণত হয়েছে। শুষ্ক মৌসুমের আগেই নদীর বুকে দেখা দিয়েছে ছোট–বড় অসংখ্য চর। প্রতিবছর বন্যার সময় অতিরিক্ত পলির কারণে নদীর পানি ধারণক্ষমতা কমে যাওয়ায় অনেক স্থানে স্থানীয়রা হাঁটাপথে নদী পারাপার করছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী উজান থেকে প্রতিবছর প্রায় দুই কোটি টন পলি তিস্তায় আসে।

নীলফামারীর ডালিয়ায় অবস্থিত দেশের সর্ববৃহৎ তিস্তা ব্যারাজ আগামী ১৫ জানুয়ারি থেকে বোরো সেচ কার্যক্রম শুরু করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে নদীর নাব্যতা কমায় সেচ কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

তিস্তা অববাহিকায় শুধু কৃষিই নয়, নদী শুকিয়ে গেলে বিলীন হচ্ছে মাছের অভয়াশ্রম, ভেঙে পড়ছে নদী-নির্ভর যোগাযোগ ব্যবস্থা। এতে জেলে, মাঝি ও চরবাসীসহ লাখো মানুষের জীবন-জীবিকা ঝুঁকির মুখে পড়ছে। শুষ্ক মৌসুমে নলকূপের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে কৃষকদের।

কৃষি বিভাগের তথ্যমতে তিস্তা নদীর অববাহিকায় বিভিন্ন চরাঞ্চলে প্রতিবছর ভুট্টা, মরিচ, পিঁয়াজ, রসুন, কুমড়া, বাদাম, আলু, গম, সূর্যমুখী ও পাট চাষ হয়। শুষ্ক মৌসুমে পানি না থাকা এবং বর্ষার অতিরিক্ত পানির কারণে কৃষকরা দ্বিমুখী সংকটে পড়েন।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উত্তরাঞ্চলের প্রধান সম্প্রসারণ কর্মকর্তা অমলেশ চন্দ্র রায় জানান, আসন্ন ইরি-বোরো মৌসুমে তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় ৫৭ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দেওয়া হবে। এতে নীলফামারী, রংপুর ও দিনাজপুরের বিভিন্ন উপজেলা সেচ পাবে। সেচ খালগুলো ইতোমধ্যে সংস্কারের কাজ চলছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন, নদীর তলপেট ভরাট ও পানি কমে যাওয়ার মূল কারণ হলো উজান থেকে ভরাট হওয়া পলি ও কিছু প্রভাবশালীর অবৈধ পাথর উত্তোলন। তিস্তার নাব্য সংকটের কারণে কৃষকরা অতিরিক্ত খরচে সেচ দিতে বাধ্য হচ্ছেন এবং মাছের অভ্যাশ্রমও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

নদী গবেষকরা বলছেন, উত্তরের পাঁচ জেলার দুই কোটি মানুষের জীবনমান রক্ষায় একমাত্র সমাধান হলো তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন। এটি বাস্তবায়িত হলে নদীতে সারা বছর নাব্য থাকবে, নৌযান চলাচল সুগম হবে এবং কৃষকরা স্বস্তিতে ফসল চাষ করতে পারবেন।

ট্যাগ
জনপ্রিয় সংবাদ

ঢাকা-১০ আসনে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করলেন আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া

শুকিয়ে যাচ্ছে তিস্তা নদী, বোরো সেচে সংকটের আশঙ্কা কৃষকের

সপ্রকাশিত হয়েছে: ০৩:০৩:৩৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৫


দেশের উত্তরাঞ্চলের ‘জীবনরেখা’ তিস্তা নদী ডিসেম্বরের শুরুতেই শুকিয়ে যেতে শুরু করেছে। এক সময়ের প্রশস্ত ও ঢেউ খেলানো নদী এখন সরু স্রোতে পরিণত হয়েছে। শুষ্ক মৌসুমের আগেই নদীর বুকে দেখা দিয়েছে ছোট–বড় অসংখ্য চর। প্রতিবছর বন্যার সময় অতিরিক্ত পলির কারণে নদীর পানি ধারণক্ষমতা কমে যাওয়ায় অনেক স্থানে স্থানীয়রা হাঁটাপথে নদী পারাপার করছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী উজান থেকে প্রতিবছর প্রায় দুই কোটি টন পলি তিস্তায় আসে।

নীলফামারীর ডালিয়ায় অবস্থিত দেশের সর্ববৃহৎ তিস্তা ব্যারাজ আগামী ১৫ জানুয়ারি থেকে বোরো সেচ কার্যক্রম শুরু করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে নদীর নাব্যতা কমায় সেচ কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

তিস্তা অববাহিকায় শুধু কৃষিই নয়, নদী শুকিয়ে গেলে বিলীন হচ্ছে মাছের অভয়াশ্রম, ভেঙে পড়ছে নদী-নির্ভর যোগাযোগ ব্যবস্থা। এতে জেলে, মাঝি ও চরবাসীসহ লাখো মানুষের জীবন-জীবিকা ঝুঁকির মুখে পড়ছে। শুষ্ক মৌসুমে নলকূপের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে কৃষকদের।

কৃষি বিভাগের তথ্যমতে তিস্তা নদীর অববাহিকায় বিভিন্ন চরাঞ্চলে প্রতিবছর ভুট্টা, মরিচ, পিঁয়াজ, রসুন, কুমড়া, বাদাম, আলু, গম, সূর্যমুখী ও পাট চাষ হয়। শুষ্ক মৌসুমে পানি না থাকা এবং বর্ষার অতিরিক্ত পানির কারণে কৃষকরা দ্বিমুখী সংকটে পড়েন।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উত্তরাঞ্চলের প্রধান সম্প্রসারণ কর্মকর্তা অমলেশ চন্দ্র রায় জানান, আসন্ন ইরি-বোরো মৌসুমে তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় ৫৭ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দেওয়া হবে। এতে নীলফামারী, রংপুর ও দিনাজপুরের বিভিন্ন উপজেলা সেচ পাবে। সেচ খালগুলো ইতোমধ্যে সংস্কারের কাজ চলছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন, নদীর তলপেট ভরাট ও পানি কমে যাওয়ার মূল কারণ হলো উজান থেকে ভরাট হওয়া পলি ও কিছু প্রভাবশালীর অবৈধ পাথর উত্তোলন। তিস্তার নাব্য সংকটের কারণে কৃষকরা অতিরিক্ত খরচে সেচ দিতে বাধ্য হচ্ছেন এবং মাছের অভ্যাশ্রমও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

নদী গবেষকরা বলছেন, উত্তরের পাঁচ জেলার দুই কোটি মানুষের জীবনমান রক্ষায় একমাত্র সমাধান হলো তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন। এটি বাস্তবায়িত হলে নদীতে সারা বছর নাব্য থাকবে, নৌযান চলাচল সুগম হবে এবং কৃষকরা স্বস্তিতে ফসল চাষ করতে পারবেন।