ক্যাপসিকাম বা মিষ্টি মরিচ এখন বাংলাদেশের কৃষকদের কাছে একটি সম্ভাবনাময় ফসল হিসেবে পরিচিত হচ্ছে। এতে ভিটামিন ‘এ’ ও ‘সি’-এর পরিমাণ বেশি থাকায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। একই সঙ্গে এতে রয়েছে ফাইবার, আয়রন ও অন্যান্য খনিজ উপাদান, অথচ ক্যালরির পরিমাণ সামান্য।
বিশ্বব্যাপী টমেটোর পরই দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ সবজি হলো ক্যাপসিকাম। আমাদের দেশে এটি প্রচলিত সবজি না হলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অভিজাত হোটেল, রেস্তোরাঁ ও সুপারশপে চাহিদা বাড়ার কারণে চাষ দ্রুত বিস্তার লাভ করছে। বিদেশে রপ্তানিরও ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে।
কৃষি বিশেষজ্ঞরা জানান, বীজ বপণের উপযুক্ত সময় অক্টোবর থেকে নভেম্বর মাস। তবে বর্তমানে কৃষকরা প্রায় সারা বছরই এর চাষের চেষ্টা করছেন। ক্যাপসিকাম উৎপাদনের জন্য ১৬°–২৫° সে. তাপমাত্রা ও শুষ্ক পরিবেশ সবচেয়ে উপযোগী। রাতের তাপমাত্রা ১৬°–২১° সে. এর কম বা বেশি হলে গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হয় এবং ফলন কমে যায়।
চাষাবাদের জন্য প্রথমে বীজতলায় চারা তৈরি করতে হয়। পরিপক্ক ফল থেকে বীজ সংগ্রহ অথবা বাজার থেকে উন্নত মানের বীজ ব্যবহার করা যায়। চারা ৩–৪ পাতা বিশিষ্ট হলে জমি বা টবে রোপণ করা হয়। টবের জন্য ১০–১২ ইঞ্চি গভীর পাত্র ব্যবহার করতে হয়। মাটি, কম্পোস্ট ও বালি ৩:১:১ অনুপাতে মিশিয়ে পটিং মিডিয়া তৈরি করলে গাছ ভালো হয়।
জমিতে চাষের ক্ষেত্রে খরা ও জলাবদ্ধতা কোনোটিই সহ্য করতে পারে না, তাই সঠিক নিকাশ ব্যবস্থা জরুরি। প্রতিটি শতকে গড়ে ৪০ কেজি গোবর, ইউরিয়া ১ কেজি, টিএসপি ১.৪ কেজি, এমপি ১ কেজি, জিপসাম ৪৫০ গ্রাম এবং জিংক অক্সাইড ২০ গ্রাম প্রয়োগের পরামর্শ দিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তারা।
এ ফসলে জাবপোকা, থ্রিপস, লাল মাকড়সহ বিভিন্ন রোগবালাই দেখা দেয়। এসব দমন করতে টক্সিনমুক্ত সমাধান ব্যবহার করাই শ্রেয়। যেমন—এক চামচ সাবানগুঁড়া ও এক টেবিল চামচ নিমতেল এক লিটার পানিতে মিশিয়ে নিয়মিত স্প্রে করলে পোকার আক্রমণ কমে আসে।
ফসল সংগ্রহের সময় প্রতিটি ফলের সঙ্গে সামান্য বোটা রেখে সংগ্রহ করলে সংরক্ষণকাল বাড়ে। সাধারণত সপ্তাহে একবার ফল সংগ্রহ করা যায় এবং একটি গাছ থেকে গড়ে চার থেকে পাঁচটি ফল পাওয়া সম্ভব।
কৃষি বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশে বর্তমানে ক্যাপসিকামের চাহিদা দ্রুত বাড়ছে। সঠিক পরিচর্যা ও আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতি অনুসরণ করলে এটি কৃষকদের জন্য লাভজনক ফসল হয়ে উঠতে পারে।